রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে এবার আগেভাগে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি, খেজুরসহ রমজানে বেশি ব্যবহৃত পণ্য ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানি করার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সুযোগের ফলে এবার বাকিতেও পণ্য আমদানি করার সুযোগ ছিল। কেউ চাইলে ন্যূনতম পেমেন্ট দিয়েও আনতে পেরেছেন রমজানের পণ্য। এর বাইরে চার ধরনের পণ্যে এবার দেওয়া হয়েছে শুল্ক ছাড়। তার পরও অস্থির ভোগ্যপণ্যের বাজার। চট্টগ্রামের প্রধান পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জে পর্যাপ্ত পণ্য মজুত থাকার পরও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ছোলা, খেজুরসহ কিছু পণ্য।
তবে রমজানের মাত্র ১৪ দিন বাকি থাকায় খাতুনগঞ্জে এখন বেচাকেনার হাট জমজমাট। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমেদ বলেন, এখন খাতুনগঞ্জে পণ্যের কোনো অভাব নেই। পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি হয়েছে। বেচাকেনাও হচ্ছে। আগের তুলনায় বেচাকেনা কিছুটা বাড়লেও সেটা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নেই।
চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ বলছেন, রমজান সামনে রেখে এবার বেশ কিছু আগাম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এটার সুফল পাবেন ভোক্তারা। অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে এবার রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
রমজানের আগে সর্বশেষ ৯০ দিনের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, আগের তুলনায় এখন পর্যন্ত কিছু পণ্য দেশে বেশি এসেছে। গত ২২ নভেম্বর থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯০ দিনে ছোলা আমদানি হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার টন। পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার টন। অ্যাঙ্কর এসেছে ১ লাখ ৮০ হাজার এবং মসুর ডাল এসেছে ১ লাখ ৭০ হাজার টন। রমজান সামনে
রেখে অপরিশোধিত চিনি এসেছে সাড়ে ৪ লাখ টন। একই সময় খেজুর এসেছে ২৮ হাজার টন। অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আড়াই ও পাম অয়েল এসেছে সাড়ে ৪ লাখ টন।
কাস্টমসের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত ৯০ দিন এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় ৪২ হাজার টন পেঁয়াজ বেশি আমদানি হয়েছে। এ ছাড়া আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার অ্যাঙ্কর ১ লাখ ৪ হাজার, মসুর ডাল ১৫ হাজার, খেজুর ১২ হাজার, গম ৩০ হাজার ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ১ লাখ টন বেশি আমদানি হয়েছে। কেবল ছোলা ও চিনির আমদানি আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম এসেছে।
শুল্ক কমানোর পরও সেভাবে কমেনি দাম
আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে বা দেশে শুল্ক-কর আরোপ হলে সঙ্গে সঙ্গেই বাজারে সেটির দাম বেড়ে যায়। যেমন ভারতে গত ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার খবরে এক রাতেই পণ্যটির দাম দ্বিগুণ হয়ে যায় বাজারে। অথচ সরকার চাল, চিনি, তেল ও খেজুরে শুল্ক-কর কমানোর দুই সপ্তাহ পরও এই চার পণ্যের দাম সেভাবে কমেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চার নিত্যপণ্যে শুল্কছাড়ের ফল পেতে আরও সময় লাগবে। রমজানের আগে এটির সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে না বলে মনে করছেন তারা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক কর ছাড় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সয়াবিন ও পাম অয়েলে কেজিতে সাত থেকে আট টাকা শুল্ক কর কমেছে। চাল আমদানিতে প্রতি কেজিতে শুল্ক কমেছে সাড়ে ২৩ টাকা। এ ছাড়া কার্টনে আনা সাধারণ মানের খেজুরের কেজিতে শুল্ক কমেছে ৩৩ টাকা। কেজিতে ৭৫ পয়সা শুল্ক কমেছে চিনিতে। এনবিআর দুই সপ্তাহ আগে আলাদা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসব পণ্য আমদানিতে শুল্ক কর কমানোর ঘোষণা দেয়। সেদিন থেকেই কার্যকর হয় নতুন শুল্কহার। তার পরও বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জে সয়াবিন তেল বেচাকেনা হয়েছে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ৫ হাজার ৭৫০ টাকায় (মিল থেকে উত্তোলনযোগ্য), পাম অয়েল মণপ্রতি ৪ হাজার ৮৪০ টাকায়। পাম অয়েলের দাম পুরো সপ্তাহ স্থির থাকলেও সয়াবিনের দাম চলতি সপ্তাহেই মণে ২৫০-৬০ টাকা বেড়ে গেছে। বাড়তি আছে চিনির দামও। চলতি সপ্তাহেই চিনির দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে। ছোলার দাম স্থির আছে ৯০-৯২ টাকায়। বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে খেজুরও। অথচ এসব পণ্যে শুল্কছাড় দিয়েছিল সরকার।