জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরোধীরা রওশন এরশাদকে সামনে রেখে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। এর অংশ হিসেবে রোববার দলের নেতাদের মতবিনিময় সভায় ডেকেছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন। যদিও বলা হচ্ছে, বিরোধীদলের নেতার পদ থেকে বিদায় উপলক্ষে এ সভা হবে।
এদিকে জি এম কাদের বিরোধীদের এই তৎপরতাকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, যারা পদত্যাগ করেছেন, তারা নতুন দল করলে স্বাগত জানাই। এটি গণতন্ত্রের জন্য শুভলক্ষণ। তবে পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ হলে, তা দেখার বিষয়।
নির্বাচনের আগে থেকেই টানাপোড়েন চলছিল জাপায়। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভরাডুবির পর দ্বন্দ্ব বেড়েছে। স্ত্রী শেরীফ কাদেরের জন্য আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসন ছাড় পাওয়া পরই জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের তার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন- এ অভিযোগ তুলে নেতৃত্বের সমালোচনা করে কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদসহ একাধিক জ্যেষ্ঠ পদ হারিয়েছেন।
ভোটের আগে দলটির একাধিক প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে যান। তাদের অভিযোগ ছিল, নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারের কাছ থেকে টাকা পেয়েছেন জি এম কাদের। ভোটে নামিয়ে প্রার্থীদের খবর নেননি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জামানত হারানো শেরীফা কাদের সংরক্ষিত আসনে দ্বাদশ সংসদে যাবেন- এ খবরে বিরোধিতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। বাদ পড়া প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সংবাদ সম্মেলন করে জাপা মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রায় ৭০০ নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
শনিবার জাপার বনানী কার্যালয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, নির্বাচনের দিন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে এজেন্ট দেওয়ার মতো লোক পাওয়া যায়নি। পদত্যাগের জন্য এত নেতাকর্মী কোথা থেকে এল? শেরীফা কাদেরের আসনে এজেন্ট পাওয়া যায়নি। সেখানে পদত্যাগের জন্য শফিকুল ইসলাম এত নেতাকর্মী কই পেলেন? বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করব। যারা পদত্যাগ করতে মিছিল নিয়ে গেছে, তাদের মাত্র সাত- আটজনকে চিনি। জাতীয় পার্টিতে এত কর্মী ছিল, সেটাও জানলাম।
দলীয় নেতৃত্ব নিয়ে জি এম কাদেরের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেননি রওশন এরশাদ, তার ছেলে রাহগীর আল মাহি এরশাদ সাদ। মনোননয়ন পাননি রওশনের অনুসারীরা। ভোটের পর যেসব নেতা জি এম কাদেরের বিরোধী হয়ে উঠেছেন, তারা চান শেরীফা কাদের নয় সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি হবে রওশন। তিনিই হবে বিরোধীদলীয় নেতা। এর মাধ্যমে ভারসাম্য থাকবে।
জি এম কাদেরের সমালোচনা করে পদ হারানোর শফিকুল ইসলাম বলেন, আলাদা দল করব নাকি জাপা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে চলবে- তা এখনও স্থির হয়নি। জি এম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে রাজনীতি করা সম্ভব নয়, এটা চূড়ান্ত। রওশন এরশাদ সবার মতো আমাকেও মতবিনিময় সভায় ডেকেছেন। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে।
এদিকে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পক্ষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য নেতৃত্ব ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অভিভাবকহীন হয়ে পড়া নেতাকর্মীদের আহ্বান সাড়া দিয়েছেন রওশন এরশাদ। লাঙ্গলের প্রার্থী ও তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। বিগত ৩৭ বছরে তিনি বারবার দলের ক্রান্তিকালে ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়ায়, ভোটে অংশ নেননি।
বিরোধীদলীয় নেতার মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশিদ বলেছেন, বিদায় বেলায় সবাইকে ডেকেছেন রওশন এরশাদ। সবার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।
খুলনা গেজেট/কেডি