খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ আষাঢ়, ১৪৩১ | ৩ জুলাই, ২০২৪

Breaking News

  সিলেটসহ ৫ জেলা পানির নিচে, বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশংকা

যৌতুকের দাবিতে নববধু নির্যাতন : স্বামী গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিয়ের মাত্র দু’মাস যেতে না যেতেই নববধূ মিতালী দাসের ওপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। যৌতুকের টাকা না পেয়ে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে শরীরের গোপনাঙ্গসহ বিভিন্ন স্থানে মশার কয়েল দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এঘটনায় ১নং আসামী বাবুল দাস (২৭) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

আজ মঙ্গলবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন দিঘলিয়া থানা পুলিশ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক চার মাস পূর্বে (গত ফাল্গুনে) বটিয়াঘাটা উপজেলার সুখদাড়া গ্রামের নিরাপদ দাসের মেয়ে মিতালী দাসের (১৯) সাথে দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামের শিবে দাসের পুত্র বাবুল দাসের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই মিতালীর শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ময়না দাস (৪০) এবং বড় ননদের স্বামী রবিন দাস যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে।

একপর্যায়ে মিল শ্রমিক বাবুল দাস উচ্চপদে চাকরিতে ৫ লাখ টাকা লাগবে বলে জানায় মিতালী দাসকে। এর ৩ লাখ টাকা মিতালীর বাবার কাছ থেকে এনে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। মিতালীর বাবা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্বশুর বাড়িতে তার সাথে সকলে খারাপ আচরণ করতে থাকে এবং বিভিন্ন হুমকি প্রদান করা হয়। এক পর্যায়ে গত ২ মে রাতে দাঁতে ব্যাথায় অসুস্থ মিতালীকে কৌশলে তার শ্বাশুড়িকে দিয়ে ঘুমের ঔষুধ খাওয়ানো হয়। পরবর্তীতে ঘুমে আচ্ছন্ন অচেতন অবস্থায় তার স্তন, তলপেট ও গোপনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মশার কয়েলের আগুনে ছ্যাঁকা দিয়ে গুরুত্বর আহত করা হয়। পরদিন খবর পেয়ে গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় মিতালীর পিতা ও দাদার সহায়তায় উদ্ধার করে সন্ধ্যায় প্রথমে বটিয়াঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হলেও শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল রয়েছে এবং তার বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন।

এ বিষয়ে নানা প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সহযোগিতায় গত ৫ জুলাই (রবিবার) দিঘলিয়া থানায় মিতালী দাস নিজে বাদী হয়ে তার স্বামীসহ মোট ৪জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন (যার মামলা নং-২, ৫-৭-২০২০)। গতকাল সোমবার থানা পুলিশ মিতালীর স্বামী বাবুল দাসকে গ্রেফতার করেছে। অন্যরা পলাতক রয়েছে।

এ বিষয়ে মিতালী দাস বলেন, ‘আমি অসুস্থ থাকার জন্য আর লকডাউনের জন্য মামলা করতে একটু দেরি হয়ে গেছে। যৌতুকের জন্য ওরা আমার সাথে যে আচরণ করেছে আর আমি যেমন নির্যাতনের স্বীকার হয়েছি এমন যেন আর না হয়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

বাদীর বাবা নিরপাদ দাস বলেন, ‘আমার মেয়েকে ওরা কঠিন নির্যাতন করেছে। মানুষ মানুষকে এভাবে নির্যাতন করতে পারে আমার জানা ছিল না। আমি চাই আমার মেয়ের এই নির্যাতনের শাস্তি হোক। আসামীরা যেন কঠিন শাস্তি পাই।’

জাতীয় মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার আঞ্চলিক সহকারি পরিচালক জেসমিন সুলতানা বলেন, ‘মামলাটি যে ধারায় নেয়ার কথা ওসি সে ধারায় মামলা নিচ্ছিল না। বিষয়টি আমাদের জানানোর পর এড. ফরিদ ভাই এবং স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি মেম্বরদের সহযোগিতায় আমরা ব্যবস্থা করেছি এবং মামলা করা হয়েছে।’

দিঘলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মনজুর হোসেন জানান, মামলার প্রধান আসামী বাবুলকে আটক করা হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) তাকে কোর্টে চালান করা হবে। আর ঘটনার সাথে অন্য আসামীদের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!