যুবলীগ নেতা ও সাবেক যোগীপোল ইউপি সদস্য মোঃ আরিফ হোসেনের নৃশংস হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুক্রবার (২৮ জুন) বিকাল ৫ টায় খুলনা যশোর মহাসড়কের ফুলবাড়িগেট বাস স্ট্যান্ড চত্বরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ৬ নং যোগীপোলবাসী ও সর্বস্তরের জনগণ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
খানজাহানআলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাবেক ছাত্রলীগনেতা এস এম জাহিদ হাসান জাকিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ- সভাপতি বেগ লিয়াকত আলী, খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনিচুর রহমান, ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর এসএম মনিরুজ্জামান মুকুল, জেলা পরিষদ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোঃ সাইফুল ইসলাম বাবু, আওয়ামী লীগ নেতা মাস্টার মনিরুল ইসলাম, সুরুজ্জামান হানিফ, জাকারিয়া রিপন, গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ আবু হেনা বাবলু, লিয়াকত মুন্সি, পারভেজ আলম, মনির শিকদার, মোঃ শাকিল আহমেদ, যুবলীগ নেতা মোঃ মিজানুর রহমান রূপম, ছাত্রলীগ নেতা সুমন শেখ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোঃ তরিকুজ্জামান খান মনির, যোগীপোল ইউপি সদস্য জিএম এনামুল কবির, গোলাম কিবরিয়া, সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ শহিদুল ইসলামসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও মহিলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ।
এছাড়াও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নিহত আরিফের পিতা সিআইডি পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আমির হোসেন, ভাই, মোঃ আসিফ ও ইঞ্জিনিয়ার আশিকুর রহমান। মানববন্ধনে নিহত আরিফের সাত বছর বয়সী ছেলে আরিয়ান ও চার বছর বয়সী ছেলে উপস্থিত হয়ে বাবার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান।
মানববন্ধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বেগ লিয়াকত আলী প্রশাসনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যুবলীগ নেতা আরিফ হত্যাকারীদের আগামী তিন দিনের ভিতর যদি গ্রেফতার করা না হয় তাহলে আমরা তিন থানার প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করবো। তিনি বলেন, পুলিশ পারে না এমন কোন কাজ৷ নেই । তারা ইচ্ছা করলে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে পারে।
খানজাহানআলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেন পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বাংলাদেশের পুলিশের যথেষ্ট যোগ্যতা আছে। যদি তারা ইচ্ছা করে তাহলে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে পারবে। আমাদের একজন দলীয় কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, এখানে আমরা সবাই বিক্ষুব্ধ। আমরা চাই প্রকৃত আসামী। প্রকৃত আসামি ধরা হোক। তিন দিনের ভিতর যদি এই আসামি ধরা ধরা না হয়, তাহলে আমরা আওয়ামী লীগের কর্মীরা ঘরে বসে থাকবো না।
২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর এসএম মনিরুজ্জামান মুকুল বলেন, নিহত আরিফ দলের একজন নিবেদিত প্রাণ কর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, এটা যেনতেন হত্যা নয়, একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য এ হত্যাকাণ্ড বলে আমি মনে করি।
উল্লেখ্য, সোমবার (২৪ জুন) রাত আনুমানিক সোয়া ১১ টার দিকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েট পকেট গেট সংলগ্ন নিজ বাড়ির সামনে সড়কের পাশে বসে যুবলীগ নেতা আরিফ হোসেন (৪০) মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। এ সময় ফুলবাড়িগেটের দিক থেকে হেলমেট পরিহিত ১ টি মোটরসাইকেলে তিনজন দুর্বৃত্ত এসে প্রথমে তার বাম পাশে বগলের নিচে একটি গুলি করে। এ সময় আরিফ পড়ে গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে পা দিয়ে চেপে ধরে মাথায় আরও দুইটি গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে নির্বিঘ্নে কুয়েট সড়ক দিয়ে খুলনা- মোংলা হাইওয়ে বাইপাস সড়কের দিকে চলে যায়। পরে আরিফের স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ।
এ ঘটনার একদিন পর ২৫ জুন রাতে আড়ংঘাটা থানা পুলিশ আড়ংঘাটা রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে সুজন সরকার (২৭) নামে সন্দেহভাজন এক যুবককে গ্রেফতার করে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আড়ংঘাটা বাইপাস এলাকা থেকে পুলিশ একটি বিদেশি পিস্তল, পিস্তলের ম্যাগজিন ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। গ্রেপ্তারকৃত সুজনকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আড়ংঘাটা থানা পুলিশের এস আই মোঃ মিনহাজুল ইসলাম ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলেও এখনও রিমান্ড মঞ্জুর হয়নি বলে আড়ংঘাটা থানা সূত্রে জানা যায়।
নিহত আরিফ খান জাহান আলী থানার ৩৩ নং ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও দিঘলিয়া উপজেলার ৬ নং যোগীপোল ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ছিলেন। তিনি ঠিকাদারি ও জমিজমা ক্রয় বিক্রয়ের দালালি ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন।
মামলার এজাহারে নিহত আরিফের পিতা সিআইডি পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আমির হোসেন কি কারনে তার ছেলে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে পারেন উল্লেখ করেনি। মামলার এজাহার অনুযায়ী আসামি অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী।
আড়ংঘাটা থানা পুলিশ গত ২৫ জুন রাতে বাইপাস থেকে সন্দেহভাজন হিসাবে শলুয়া গ্রামের দুলাল সরকারের পুত্র সুজন সরদারকে একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিন রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার করে।
খুলনা গেজেট/কেডি