খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  অপারেশন ডেভিল হান্টে ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে গ্রেপ্তার ৭৪৩

যুবলীগ নেতার দখলে আপন খালার জমি, উদ্ধারের ঘুরছেন তিন দশক

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ড যুবলীগের এক সদস্যের বিরুদ্ধে আপন খালার জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। বিগত সরকারের আমলে জমি ফেরত চেয়ে স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোন সুফল পাননি ওই ভুক্তভোগী। আওয়ামী সরকারের পতনের পর জমি ফেরতের দাবি নিয়ে যুবলীগের ওই নেতার কাছে গেলে তাকেসহ পরিবারের অন্যান্যকে হত্যার হুমকি প্রদান করেন যুবলীগ নেতা ইব্রাহীম আহমেদ তপু ও তার বড়ভাই বদির আহমেদ।

ভুক্তভোগীরা জানান, ১৮৮ বিকে মেইন রোডের বাসিন্দা আবু বক্কর শেখের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১১ জন। ১৯৯৪ সালে বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা ওয়ারেশ সূত্রে বানিয়াখামার মৌজায় এক বিঘা জমি বুঝে নেন। যুবলীগ নেতার খালা রাজিয়া খাতুনও ওয়ারেশ সূত্রে জেএল নং ৩ খতিয়ান ২৫-২৫৬৫০ দাগ নং ২৬৫০৪ এবং জমির পরিমাণ ০২২২১০ দেওয়া হয়। কিন্তু ছোটবোন রশিদা খাতুন নিজের জমিতে ঘর নির্মাণ না করেই বড়বোনের জায়গায় আধাপাকা টিনসেডের ঘর তুলে দু’ ছেলে এবং ৩ মেয়ে নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন। রশিদা খাতুনের দু’ ছেলের মধ্যে বড়জন হলেন বদির আহমেদ এবং অপরজন হলেন ইব্রাহিম আহমেদ তপু। তিনি আওয়ামী সহযোগী সংগঠন যুবলীগ খুলনা ২৭ নং ওয়ার্ডের যুগ্ম আহবায়ক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৭ নং ওয়ার্ড যুবলীগের ওই যুগ্ম আহবায়ক জীবিকার জন্য ঢাকায় যান।  ২০০০ সালে তিনি ঢাকা থেকে খুলনায় এসে টিভি মেরামত করার জন্য তার ছোট খালার একটি দোকান ভাড়া নেন। কিন্তু কোন দিন সেই দোকানের একটি টাকা ভাড়া হিসেবে পরিশোধ করেনি। এরপর ব্যবসা পরিবর্তন করে তিনি সিডির ব্যবসা শুরু করেন। সিডি ব্যবসার অন্তারলে তিনি ওই দোকানে চলতে থাকে জুয়ার জমজমাট আসর। পরিচিত অনেক পুলিশ তার কাছ থেকে এ ব্যাপারের আর্থিক সুবিধাও নিত বলে জানা গেছে।

২০০৮ সালে বিএনপি ক্ষমতা থেকে চলে গেলে আপন খালাকে শায়েস্তা করার জন্য আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন ওই নেতা। যোগদেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজানের গ্রুপে। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মিজানের অন্যতম সহযোগী খুলনা ২৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক এক কাউন্সিলরের সাথে বেশ দহরম সম্পর্ক স্থাপন করেন। এরপর তিনি ডেকোরেটরের ব্যবসা শুরু করে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার ডেকোরেটরের মালামাল ফ্রিতে সাপ্লাই দিতো।

২০১৮ সালে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক পদ হারালে মিজানকে ছেড়ে দিয়ে তিনি সাবেক এমপি শেখ জুয়েলের সাথে সম্পৃক্ত হন। এর আগে আপন খালার ছোট ছেলের মৃত্যু হলে পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে মৃত ছেলের নামে মাদ্রাসা নির্মাণের জন্য মনস্থির করেন। ওই জায়াগা খালি করার জন্য তিনি তিনি বারবার তাগিদ দেন। কিন্তু তাতে কোন ভাল ফলাফল আসেনি। তখন জানানো হয় স্থানীয় প্রতিনিধিদের। কিন্তু ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু আওয়ামী লীগ থাকায় সেদিন কোন প্রতিনিধির কথায় ওই যুবলীগ নেতা কর্নপাত করেনি। ক্ষমতার জোরে পুলিশ দিয়ে তাকেসহ পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করতেও ছাড় দেয়নি ওই নেতা।

২০১৮-২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্যাপক প্রতাপের সাথে দিন কাটিয়েছেন ওই যুবলীগের নেতা। ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলেও চাউর উঠেছে তিনি জামা বদল করে বিএনপি রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার জন্য দৌড় ঝাপ শুরু করেছেন। বেশ জোরেশোরে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করছেন তিনি।

ভুক্তভোগী খালা রাজিয়া খাতুন বলেন, পৈত্রিক ওই সম্পত্তি আমার বেশ প্রয়োজন। অসুস্থ্য শরীর নিয়েও কয়েকবার যোগাযোগ করেছি তাদের সাথে। কিন্তু তারা আজ নয় কাল বলে কালক্ষেপন করছে তারা। আইনী আশ্রয় নেওয়ার কথা বললে তার ছেলেসহ পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যার হুমকি প্রদান করেন ওই যুবলীগ নেতা ও তার বড়ভাই বদির আহমেদ। তিনি আরও বলেন, জমি জমার মামলা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আদালতে গিয়ে তার জীবদশায় জায়াগা ফিরে পাবেন কি না সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

২০১৫ সালে খালা রাজিয়া খাতুন পৈত্রিক সম্পত্তিতে নিজের পুত্রের নামে মাদ্রাসা নির্মানের উদ্যোগ নিলেও সেটি বিফলে যায়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ক্ষমতার দাপটে খুলনা থানার পুলিশদের সাথে যোগাযোগ করে ওই নেতা কাজটি বন্ধ করে দেয়। সে সময়ে তার ছোট ছেলেকে পুলিশ দিয়ে হয়রানী করেন যুবলীগ নেতা। দেশে এখন প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। তিনি জায়গাটি ফেরত পাওয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!