খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

যুবলীগ নেতাদের কাছে ফকিরহাট ও চিতলমারী হেভিওয়েট প্রার্থীদের হার

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাগেরহাটের ফকিরহাট ও চিতলমারীতে বর্তমান চেয়ারমান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের ভরাডুবি হয়েছে।দুই উপজেলায় ৬টি পদে নতুন প্রার্থীরা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।

ফকিরহাটে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাসকে হারিয়ে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক সেখ ওয়াহিদুজ্জামান বাবু নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে স্থগিত করা হয়েছিল বাবুর নেতৃত্বাধীন উপজেলা যুবলীগের কার্যক্রম।এর পরেও ভোটের হিসেবে শেষ হাসি হেসেছেন বাবু।

এই নির্বাচনে সেখ ওয়াহিদুজ্জামান বাবু মোটরসাইকেল প্রতীকে ৪৬ হাজার ৬৫৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাস পেয়েছেন ২৯ হাজার ৭৭৭ ভোট। এই উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে নতুন প্রার্থী শেখ ইমরুল হাসান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তহুরা খাতুন নির্বাচিত হয়েছেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান,উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বপন কুমার দাস প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত।তিনি ২০০৩ সালের সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। দীর্ঘ ২০ বছর তিনি দলীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।ফকিরহাটে আওয়ামী লীগে অপ্রতিদ্বন্দী ব্যক্তি তিনি।এরপরও তার পরাজয়ে উপজেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা অমর কুমার ঘোষ বলেন,ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, নিজের ইচ্ছামত উপজেলা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গুলো তৈরি করা পরাজয়ের অন্যতম কারণ। পাশাপাশি সাধারণ জনগনের সম্পৃক্ততার অভাব ছিল তার মধ্যে।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খান মাহমুদ আরিফুল হক বলেন, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তিনি নির্বাচিত হবেন এই ধারণার কারণে সাধারণ জনগণের সাথে উনার কোন সম্পর্ক ছিল না। জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের মতামত ব্যক্ত করার কারণে তার এই পরাজয়।

সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শহীদুজ্জামান নাজু বলেন, উপজেলায় অসম উন্নয়ন, ক্ষমতার অপব্যবহার, নেতাকর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ বাণিজ্য সহ বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারনে সমালোচিত হওয়ায় তার পরাজয় বলে মনে করেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মল্লিক আবুল কালাম আজাদ সাহেব দলীয় নেতার পরাজয়ের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে বলেন, এক দুই দিনের মধ্যেআমরা নির্বাচন মূল্যায়ন সভা করে পরাজয়ের কারণ বলতে পারবো।

অপরদিকে চিতলমারী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দীর্ঘদিন ধরে দলের বাইরে থাকা বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা আবু জাফর মোঃ আলমগীর হোসেনের কাছে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অশোক কুমার বড়াল বিপুল ভোটে হেরেছেন। আবু জাফর মোঃ আলমগীর হোসেন দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩৬ হাজার ১১১ ভোট। প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী অশোক কুমার বড়াল মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৭ হাজার ৮৫৭ ভোট। উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী এই নেতার ভরাডুবি নিয়ে উপজেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা করছেন নাগরিকরা।

সাধারণ ভোটাদের ভাষ্যমতে, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ মাহাতুজ্জামানের পক্ষে ভোট প্রার্থনা, সাধারণ মানুষের কাছে কম যাওয়া,ক্ষমতার অপব্যবহার নিজ বংশের লোকদের সাথে দুঃসম্পর্কের কারণে তার এই ভরাডুবি হয়েছে।

এছাড়া,এই উপজেলোয় বিপুল ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নতুন প্রার্থী কাজী আজমীর আলী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রথমবারের মত সুলতানা মল্লিক জয় লাভ করেছেন।

জানা গেছে, চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন আবু জাফর মোঃ আলমগীর হোসেন। ২০০০ সালে একটি হত্যা মামলায় দল থেকে বহিস্কার করা হয়। দীর্ঘদিন কারাভোগের মামলায় তিনি নির্দোষ প্রমানিত হওয়ায় বেকসুর খালাস পান। এরপর বাড়িতে ফিরে বারবার বাদশা বাহিনীর হামলার শিকার হন। মূলত হামলা, মামলা ও ক্ষমতাসনীদের অত্যাচারের ফলে আলমগীরের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।

ভোটার ফারুক হোসেন জানান, আলমগীরের প্রতি দুর্বব্যবহার, বর্বরতার জবাব দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা ভালবাসার প্রতিফলন ঘটিয়েছে।

নাম প্রকাশ করার শর্তে প্রবীণ এক কলেজ শিক্ষক জানান, স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার আখের গোছানোর কারণে দলে নিবেদিত প্রাণরা আজ দূরে সরে গেছে। সুযোগ পাওয়ায় সাধারণ ভোটাররা জবাব দিয়েছেন।

চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সমীর কর্মকার পাগলা বলেন, শেখ মাহাতাবুজ্জামানসহ কয়েকজন উপজেলায় টিআর, কাবিখা ও টেন্ডারবাজির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল। তাদের কারণে সাধারণ মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল। সেই সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে সাধারণ মানুষ আলমগীর ভাই, সুলতানা ও আজমীর কাজীকে ভোট দিয়েছে।

২১ মে নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগের দুই নেতার ভরাডুবির কারণ জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভুইয়া হেমায়েত উদ্দিন বলেন, চিতলমারী ও ফকিরহাটে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এখানে যে প্রার্থী জিতেছেন তিনি মূলত আঞ্চলিকতার জন্য জিতেছেন। তিনি যে এলাকার লোক সেখানকার লোক একাট্টা হয়ে এলাকার প্রার্থী জিতানোর জন্য কাজ করছেন এবং ভোট দিয়েছেন । এটাই মূল বিষয়, হেরে যাওয়া প্রার্থী ও দলের কোন সমস্যা না।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!