তেরখাদা উপজেলার ভূতিয়ার বিল, বাসুয়াখালী বিল, কোলা বিলসহ বিভিন্ন বিলে খালে নিষিদ্ধ ট্রেন জাল, কারেন্ট জাল, চায়না জাল দিয়ে নির্বিচারে ছোট-বড় মাছ শিকারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিষিদ্ধ জাল দিয়ে আবাদে মাছ শিকার করায় এ অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মৎস সম্পদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পরিবেশবিদরা।
উপজেলা সদরের মাঝিপাড়া এলাকার মৎস্যজীবী মিহির বলেন, আমরা সারা বছর মাছ ধরে নির্বাহ করি। বর্তমানে দেশী প্রজাতির মাছের বড় অভাব। নিষিদ্ধ সুক্ষ চায়না, ট্রেন ও কারেন্ট জাল দিয়ে নদী-নালা, খাল বিল জুড়ে যেভাবে মাছ ধরা হচ্ছে তাতে কিছুদিনের মধ্যে ক্রমেই মাছশুন্য হয়ে পড়বে। এই জালে পানিতে থাকা পোকা পর্যন্ত মরে যাচ্ছে, যা এ অঞ্চলের জন্য হুমকি স্বরুপ।উপজেলার কয়েকটি নদী-নালা, খাল-বিল ও ছোট বড় জলাশয়ে গিয়ে দেখা গেছে, নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন জেলেরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জেলে বলেন, বর্তমানে রাতে এ সকল অবৈধ জাল পেতে রেখে পরদিন খুব ভোরে জাল উঠিয়ে মাছ ধরছে। তাদের জালে আটকা পড়ে শুধু মাছই নয়! নানা রকম জলজ প্রাণি এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাছ ছেকে তোলা হয় জাল দিয়ে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে কৈ, শিং, টেংরা, শৈল, গজাল, টাকি থেকে শুরু করে ছোট বড় মাছ। সঙ্গে ছোট ছোট কাঁকড়া, কুচিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ছাড়াও পানিতে বাস করা বিভিন্ন প্রজাতির উপকরী পোকা মাকড় ও জালে আটকে যাচ্ছে। ডাঙ্গায় তুলে এসব প্রাণি ও পোকামাকড় মেরে ফেলছে মাছ শিকারীরা। চায়না ও ট্রেন জাল এক থেকে দেড় ফুট প্রস্ত ও ৪০ থেকে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ক্ষুদ্র ফাঁস বিশিষ্ট হয়। লোহার রিং দিয়ে ঢোলক আকৃতি ও মাঝে মাঝে চতুর্ভুজ আকারে তৈরি হয় এই বিশাল ফাঁদ। একটি জালে ৪০ থেকে ৫০ টি টোপ থাকে। বিশেষ কৌশলে এ জালের দুই মাথা খুঁটির সঙ্গে বেধেঁ চেপে রাখে খাল বিল, নদী নালা ও জলাশয়ের তলদেশে। এই জালে ক্ষুদ্র ফাঁস থাকার কারনে ছোট বড় মাছ অনায়াসে জালে আটকে পড়ে। ফলে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন বংশ বিস্তার ও বৃদ্ধি ব্যহত হচ্ছে। এর প্রভাবে নদী-নালা, খাল-বিল মাছের প্রাচুর্য কমে গেছে। উপজেলার নিচু জমি জলাশয়, নদী-নালা, খাল-বিল জুড়ে কারেন্ট জাল, ট্রেন জাল ও চায়না জাল ব্যবহার বন্ধ না হলে দেশীয় মাছ বিলুপ্তি হওয়ার আশংকা রয়েছে। উপজেলা সদরের কাটেংগা, জয়সেনা, তেরখাদা বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে অবাধে এসব নিষিদ্ধ জাল বিক্রি হয়। এসব জাল সারা রাত জলাসয়ে পেতে রেখে সকালে তুললে কৈ, টেংরা, খলিশা, পুঁঠিসহ দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ পাওয়া যায়। কারেন্ট জালে যে ছোট মাছ ধরা পড়েনা চায়না ও ট্রেন জালে সহজেই তা ধরা পড়ে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান বলেন, অবৈধ নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল বা ফাঁদ নদী -নালা, খাল- বিল ও মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য সম্পদের জন্য বিরাট হুমকিস্বরূপ। এদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
খুলনা গেজেট/এএজে