খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ মাঘ, ১৪৩১ | ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  তিন ঘণ্টা পর হাজারীবাগের ট্যানারি গোডাউনের আগুন নিয়ন্ত্রণে
  চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত

যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর ফের ইসরায়েলি হামলা, ৮০ ফিলিস্তিনি নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজায় ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি হলেও হামলা থামেনি। বুধবার রাতে এ চুক্তি সই হয়। এর পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২৩০ জন। হতাহতদের মধ্যে ২০ শিশু ও ২৫ নারী রয়েছেন। কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তি কার্যকর হবে আগামী রোববার থেকে। এ নিয়ে গাজার বাসিন্দাদের মধ্যে বেদনামিশ্রিত আনন্দ দেখা গেছে। তারা বাড়িঘরে ফিরবেন। এসবের মধ্যেই হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। খবর দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসির।

এরই মধ্যে চুক্তির বিস্তারিত আসতে শুরু করেছে। তিন ধাপে এ চুক্তি বাস্তবায়ন হবে। প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহ ধরে চলবে যুদ্ধবিরতি। এ সময় হামাস তাদের হাতে থাকা ৩৩ জিম্মিকে মুক্ত করবে। ইসরায়েল তাদের কারাগারে আটকে রাখা নারী-শিশুসহ কয়েকশ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে। ইসরায়েলের একজন জিম্মির বিনিময়ে মুক্ত হবেন ৫০ ফিলিস্তিনি। যাদের মুক্ত করা হবে, তাদের মধ্যে ৩০ জন দোষী সাব্যস্ত হয়ে ইসরায়েলের কারাগারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। প্রথম ধাপে গাজায় ত্রাণ ও জ্বালানিবাহী গাড়ি প্রবেশ করবে।

দ্বিতীয় ধাপে ইসরায়েলের সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। মুক্তি পাবেন হামাসের হাতে আটক থাকা ইসরায়েলের সেনাসদস্যরাও। এ ধাপে গাজা উপত্যকা থেকে সব সেনা সরিয়ে নেবে ইসরায়েল। পাশাপাশি স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধে দু’পক্ষ আলোচনায় বসবে।

তৃতীয় ধাপ নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে। এ ধাপে বন্দি অবস্থায় মৃতদের দেহ হস্তান্তরের বিষয় থাকতে পারে। এ ছাড়া গাজার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ কারা করবে এবং পুনর্গঠন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর গাজা কাদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের হাতে শাসনভার দিতে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইসরায়েল একেবারে হামলা চালাবে না– এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছেন না। কারণ, লেবাননে যুদ্ধবিরতি ভেঙে তারা হামলা চালিয়েছে।

এ যুদ্ধবিরতি চুক্তি সরাসরি তদারকি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক প্রতিনিধি স্টিভেন উইটকফ। দ্য গার্ডিয়ান জানায়, চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে ট্রাম্প জোর চাপ দিয়েছেন নেতানিয়াহুকে। এ ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সরেজমিন কাজ করেছেন উইটকফ। এর আগে চুক্তিটির খসড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদন করে। গত বছর এটি পর্যালোচনা করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। চুক্তির পর এর কৃতিত্ব দাবি করে ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট দিয়েছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে বাইডেন বলেছেন, এটা তাঁর কূটনৈতিক সফলতা।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি জানান, চুক্তির ৭২ ঘণ্টা পর রোববার তা কার্যকর হবে। ততক্ষণে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা এটির অনুমোদন দেবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, এ চুক্তির মাধ্যমে গাজায় লড়াই বন্ধ হবে; ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের কাছে অতি প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা পৌঁছবে। সেই সঙ্গে জিম্মিরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হতে পারবেন। নেতানিয়াহু বলেছেন, চুক্তির চূড়ান্ত বিবরণ এখনও পর্যালোচনা করা হয়নি। তবে বাইডেন এটা করায় তাঁকে ধন্যবাদ। চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে হামাসের নেতা খলির আল-হাইয়া বলেন, এটা ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতিরোধের ফসল।

বিবিসি জানায়, চুক্তির খবরে অনেক ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলের পরিবার উদযাপন করলেও গাজায় হামলা অব্যাহত আছে। বৃহস্পতিবার ড্রোন ও যুদ্ধবিমান দিয়ে ইসরায়েল ব্যাপক হামলা চালায়। হামলা হয়েছে নুসেইরাত ও বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে, জাবালিয়া ও উত্তর গাজায়। চুক্তির বিষয় ঘোষণার পরপরই ইসরায়েল উত্তর গাজার শেখ রিদওয়ান আবাসিক এলাকায় হামলায় চালিয়ে ২০ জনকে হত্যা করে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা ও ২৫০ জনকে জিম্মি করে হামাস। পরে গাজায় হামলা শুরু হয়। এ পর্যন্ত তারা ৪৬ হাজার ৭৮৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৪৫৩ জন। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞে উপত্যকাটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে খাবার, জ্বালানি, ওষুধের ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। গাজার বাসিন্দারা তীব্র শীতের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চলতি শীত মৌসুমে সেখানে ঠান্ডায় মৃত্যু হয়েছে অনেক শিশুর।

কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের গালফ স্টাডিজ সেন্টারের অধ্যাপক লুসিয়ানো জাক্কারা বলেন, জো বাইডেনের একটি কথা সত্য হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, গাজায় সামরিক বিজয় সম্ভব নয়। সেটাই হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধ হচ্ছে চুক্তি করেই। এতে হামাস হয়তো দুর্বল হবে, কিন্তু তাদের নির্মূল করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অধ্যাপক লুসিয়ানো বলেন, মিসর ও গাজার মধ্যকার ফিলাডেলফিয়া করিডোর থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের সম্মতিতে তিনি বিস্মিত হয়েছেন।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!