যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ধরনের হুমকির জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। গতকাল বুধবার দেশটির ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি বলেছেন, কোনো হুমকিই এমনিতে পার পাবে না।
জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন সেনাসদস্য নিহত হন। আহত হয়েছেন প্রায় ৪০ জন। গত রোববারের এ হামলার জন্য ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে পেন্টাগন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, অস্ত্রের জোগানদাতা হিসেবে এ হামলার দায় ইরানকে নিতে হবে। মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন দেশে রাজনৈতিকভাবে চাপে পড়া ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট।
আইআরজিসি প্রধান বলেন, ‘আমরা আমেরিকান কর্মকর্তাদের কাছ থেকে হুমকি শুনতে পাচ্ছি। আমরা তাঁদের বলছি, ইতিমধ্যে তারা আমাদের পরীক্ষা করেছেন। আর আমরা এখন একে অপরকে জানি। কোনো হুমকিই এমনিতে পার পাবে না।’
২০২০ সালে আইআরজিসির কুদস বাহিনীর কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন। এ হামলার জবাবে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের আইন আল-আসাদ ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইরান।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইয়েদ ইরাভানিও গতকাল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইরানি ভূখণ্ডে বা স্বার্থে কিংবা দেশের বাইরে ইরানি কোনো নাগরিকের ওপর যেকোনো ধরনের হামলার কড়া জবাব দেবে ইরান।
জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাইডেনের
ইরানি কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণের আগের দিনই প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, জর্ডানে সেনাঘাঁটিতে ইরান-সমর্থিত ইরাকি গোষ্ঠীর ড্রোন হামলার জবাব কীভাবে দেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি বাইডেন।
জর্ডানে মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলার জবাব কী হবে, তা নির্ধারণে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে শীর্ষ উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাইডেন। এরপর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে এয়ারফোর্স-ওয়ান উড়োজাহাজে ফ্লোরিডার উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
এদিন সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বাইডেনের কাছে জানতে চাওয়া হয় কীভাবে হামলার জবাব দেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন কি না। জবাবে বাইডেন বলেন, ‘হ্যাঁ।’ এ ঘটনায় ইরান দায়ী কি না, জানতে চাওয়া হলে বাইডেন বলেন, ‘যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের তারা (ইরান) অস্ত্র সরবরাহ করছে। সে জায়গা থেকে আমি তাদের দায়ী করব।’
বাইডেন আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে বড় আকারে যুদ্ধ বাধানোর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আমি সে রকম কিছু চাইছি না।’
গতকাল হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবিও বাইডেনের সঙ্গে ছিলেন। এয়ারফোর্স-ওয়ানে বসে কারবিও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি আভাস দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার জবাব দিতে পারে।
কারবি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটি উপযুক্ত কায়দায় জবাব দেব, তা প্রত্যাশা করাটা আপনাদের জায়গা থেকে ন্যায্য। আর খুব সম্ভবত আপনারা বহুমাত্রিক পদক্ষেপ দেখতে পাবেন। শুধু একটি নয়, অবশ্যই একাধিকবার জবাব দেওয়া হবে।’
ইসরায়েলের হামলায় সিরিয়ায় আইআরজিসির কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০ জানুয়ারি এক হামলায় পাঁচজন আর গত ২৫ ডিসেম্বর আরেক হামলায় আরও দুজন নিহত হন।
ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, গত সোমবার সিরিয়ায় ইসরায়েল ‘ইরানি সামরিক পরামর্শক কেন্দ্রে’ হামলা চালিয়েছে। এতে দুজন নিহত হন। তবে সিরিয়ায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত তা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, হামলায় হতাহত ব্যক্তিরা ইরানের নাগরিক নন।
ইরাকের আধা স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তানে ১৫ জানুয়ারি হামলা চালায় ইরান। সেখানে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ‘দপ্তরকে’ লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল বলে দাবি করে আইআরজিসি।