পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও পাকিস্তান। দেশগুলোর ঢাকাস্থ দূতাবাসের মাধ্যমে এ অভিনন্দন বার্তা প্রচার করা হয়।
পদ্মা সেতু নির্মাণকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সংযুক্তি বিকাশে বাংলাদেশের নেতৃত্বের আরেকটি উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এই মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে মানুষ ও পণ্য পরিবহনের জন্য টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ অপরিহার্য। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করবে। তেমনি এটি ব্যবসার বিকাশ ও জীবনের গুণগত মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। মার্কিন দূতাবাস বলেছে, পদ্মা সেতু নির্মাণ দক্ষিণ এশিয়ায় সংযুক্তির বিকাশে বাংলাদেশের নেতৃত্বের আরেকটি দৃষ্টান্ত।
চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, পদ্মা সেতু আমার কাছে সাহসের একটি প্রতীক, সংকল্পের প্রতীক এবং সমৃদ্ধিরও প্রতীক। পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ঢাকায় চীনা দূতাবাসের ফেসবুক পেজের নিয়মিত আয়োজন ‘রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এক মিনিট’ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতের ভিডিও বার্তাটি প্রচার করা হয়েছে। লি জিমিং বলেন, ‘আজ শনিবার একটি মহৎ দিন! বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতু অবশেষে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, আর এক দশকের স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে! এ পর্যায়ে আমি এই অসামান্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশের জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাতে চাই! আজ আমার কাছে রয়েছে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি এই ক্ষুদ্রাকৃতির পদ্মা সেতু। সেতুটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়নকারী কোম্পানি চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ বা এমবিইসি এটিকে আমার কাছে একটি স্মারক হিসেবে পাঠিয়েছে।’
নিজের অর্থে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নির্মাণে সাহসিকতার প্রশংসা করে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, সেতুটি আমার কাছে সাহসের একটি প্রতীক। স্বল্পোন্নত দেশ বাংলাদেশ এমন সেতু নির্মাণ করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় ছিল। আজ সেতুটি শুধু বাস্তবায়নই হয়নি, বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে এর শতভাগ নির্মিত হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে যদি সাহসের কোনো সীমা না থাকে, তবে আকাশ তার সীমা। লি জিমিং বলেন, পদ্মা সেতু একটি সংকল্পের প্রতীক। সেতুটি নির্মাণে সময় লেগেছে আট বছর; শক্তিশালী পদ্মার স্রোতধারার ওপর এর অবয়ব একটি গল্প বলছে যে কীভাবে মানব প্রকৌশল প্রকৃতির শক্তিকে জয় করেছে। নদী হয়তো হাজার বছর ধরে বহমান, কিন্তু এর চেয়ে বেশি টেকসই হলো সেই মানুষের অধ্যবসায়, যারা একদম শূন্য থেকে সেতুটি তৈরি করেছেন। চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘পদ্মা সেতু সমৃদ্ধিরও প্রতীক।
বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে সেতুটি বাংলাদেশের জিডিপি ১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পারে এবং বাংলাদেশের অর্ধেক জনসংখ্যাকে উপকৃত করতে পারে। এটি কেবল এ দেশ এবং অঞ্চলকে সংযুক্ত করবে না, বরং অভিন্ন সমৃদ্ধি এবং একটি সমন্বিত ভবিষ্যতের পথে পরিচালিত করার মাধ্যমে আমাদের দুই দেশের মানুষকে হৃদয় দিয়ে সংযুক্ত করবে।’
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সমাপ্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শেহবাজ শরীফ। এক বার্তায় এ অভিনন্দন জানান তিনি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শেহবাজ শরীফ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো বার্তায় বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ সমাপ্তিতে, আমি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সে দেশের জনগণকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় এই সেতুটির উদ্বোধন এক দৃষ্টান্ত উদাহরণ। এটি বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই ও স্থায়ী উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যেটা প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় সংকল্পের একটি প্রমাণ।
এরই ধারাবাহিকতায়, আমি রাষ্ট্রপ্রধানের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি, সেইসঙ্গে বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের দীর্ঘস্থায়ী উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আমার ব্যক্তিগত অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ‘অনুগ্রহ করে আমার এই অভিনন্দন সর্বোচ্চ বিবেচনায় গ্রহণ করুন।’