বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল এলাকাজুড়ে বয়ে যাওয়া তুষারঝড়ে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে; সেই সঙ্গে ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় ভোগান্তিতে পড়েছেন অন্তত ২০ কোটি মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের (এনডব্লিউএস) বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার দিনজুড়ে যে তুষারঝড় বয়ে গেছে— তার ব্যাপ্তি ছিল দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য টেক্সাস থেকে সর্বউত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য মাইন পর্যন্ত, অর্থাৎ ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি। এ ঝড়কে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ বলে শুক্রবার এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনডব্লিউএস।
শুক্রবার দিন গড়ানোর পর ঝড়ের তেজ খানিকটা কমে এলেও এখনও দেশটির বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে আবহাওয়া পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। লাখ লাখ বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠান এখনও বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছে, এবং বিমানবন্দরগুলোতে ইতোমধ্যে বাতিল হয়েছে ৮ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট।
দেশটির বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ঝড়ো হাওয়া ও তুষারপাত অব্যাহত আছে এখনও। পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যে মনটানার তাপমাত্রা ওঠা নামা করছে মাইনাস ৪০ থেকে মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা ঢেকে গেছে বরফের পুরু স্তরে। এছাড়া মিশিগান, বাফেলো, নিউইয়র্ক, সাউথ ডাকোটা, কলরাডো, কানসাস, ওয়াইওমিং, টেনেসি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, কেন্টাকি, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওকলাহোমা রাজ্যে বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে এখনও অব্যাহত আছে তুষারপাত এবং তাপমাত্রা ওঠানামা করছে মাইনাস ৩২ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৪২ ডিগ্রির মধ্যে।
কানসাস, টেনেসি ও ওয়াইওমিং অঙ্গরাজ্যের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, গত ২৬ বছরে এত নিম্ন তাপমাত্রা দেখা যায়নি। ঝড়ো হওয়া, তাপমাত্রা হ্রাস ও তুষারপাতের জেরে নিউইয়র্ক, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, কেন্টাকি, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ইতোমধ্যে জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
সেই সঙ্গে জ্বালানি সংকট যাওয়ায় আবহাওয়াগত জরুরি অবস্থা জারির পাশাপাশি জ্বালানিগত জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করেছে সাউথ ডাকোটা এবং উইসকনসিন।
এছাড়া ঝড়ের প্রভাবে দেশটির নিউ ইংল্যান্ড, নিউ ইয়র্ক এবং নিউজার্সির উপকূলীয় অনেক এলাকায় বন্যাও শুরু হয়েছে।
বৈরী এই আবহাগত পরিস্থিতি সবার জন্য ভোগান্তির সৃষ্টি করলেও সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন দেশটির আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানরা। যুক্তরাষ্ট্রে যে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে এখনও তারা টিকে আছেন, সেসবের মধ্যে সাউথ ডাকোটা অন্যতম। রাজ্যের পাস ক্রিক জেলার পাইন রিজ রিজার্ভেশন দেশটির রেড ইন্ডিয়ানদের সবচেয়ে বড় সংরক্ষিত অঞ্চল।
সাউথ ডাকোটার রেড ইন্ডিয়ানদের অন্যতম নেতা ফ্র্যাঙ্ক স্টার বিবিসিকে বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়া ও ভারী তুষারপাতের কারণে বহুসংখ্যক লোকজন বাড়িতে গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন এবং তাদের এ পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে জ্বালানি সংকট।
খুলনা গেজেট/ এসজেড