যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত বাংলাদেশী গবেষক শেখ আবির হোসেনের মরদেহ ১২ দিন পর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে। সব প্রক্রিয়া শেষে বুধবার (১০ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ঝাপাঘাট গ্রামে মরদেহটি পৌঁছায়।
মরদেহটি দেখতে কয়েক গ্রামের মানুষ এসে ভিড় জমান আবিরের বাড়িতে। আবিরের মরদেহ কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে তা মা, ভাই-বোন ও স্বজনেরা। এর আগে শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রে টেক্সাসের বিউমন্টে ক্রিস ফুড মার্ট নামে রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাংলাদেশী এই গবেষক নিহত হন।
শেখ আবির হোসেন (৩৮) সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের ঝাপাঘাট গ্রামের মৃত শেখ আজিজুল হাকিমের ছেলে। তিনি টেক্সাসের লামার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহকারী ছিলেন। পাশাপাশি একটি রেস্টুরেন্টে খণ্ডকালীন কাজ করতেন। আবিরের স্ত্রী সানজিদা আলম তাদের একমাত্র শিশুকন্যা আরশিয়াকে (২) নিয়ে নিউইয়র্কে তার মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন। আর আবির থাকতেন টেক্সাসে। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে ২০১৪ সালে শেখ আবির হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেন। এরপর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বরে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি।
আবিরের মেজ ভাই শেখ জাকির হোসেন বলেন, দীর্ঘ ১২ দিন পর আমার ভাই আবিবের মরদেহটি গ্রামে পৌঁছালো। এই ১২ দিন চোখের পানিতে অশ্রুশিক্ত হয়েছে পরিবারসহ স্বজনরা। ভাইয়ের এমন মৃত্যু মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আত্মীয়-স্বজন, গ্রামের মানুষ সবাই বাড়িতে এসেছেন আবিরকে শেষবারের মতো এক পলক দেখতে। আবিরের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
এর আগে আবিরের স্ত্রী সানজিদা আলম নিউইয়র্ক থেকে গণমাধ্যমকে বলেন, বাবা-মায়ের সাথে আমি নিউইয়র্কে অবস্থান করছি। এখান থেকে টেক্সাসের দূরত্বটা বেশ। টেক্সাসে অবস্থান করা আমার কাজিনরা মরদেহ নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের কাছে হস্তান্তর করেনি। আমি তার লিগ্যাল অভিভাবক হওয়ায় আমার স্বাক্ষর ছাড়া তার মরদেহ হস্তান্তর করেনি। এখানে বর্তমানে ছুটি চলছে। তাই সেখানকার একটি হাসপাতালের হিমাগারে মরদেহটি রাখা ছিল। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার তার ময়নাতদন্ত শেষে নিয়ম অনুযায়ী মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
আবিরের মেজ ভাই শেখ জাকির হোসেন আরও বলেন, আমার ভাই আবির খুব মেধাবী ছিল। সে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের লামার বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির জন্য স্কলারশিপ পায়। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পিএইচডি শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় সহকারী হিসাবে কাজ করত। যুক্তরাষ্ট্রের যাওয়ার ছয় মাস পরে তার স্ত্রী ও বাচ্চাকে সেখানে নিয়ে যায়। গবেষণা কাজের পাশাপাশি টেক্সাসের স্থানীয় ক্রিস ফুড মার্ট নামে একটি রেস্টুরেন্টে খন্ডকালীন কাজ করত আবির। রেস্টুরেন্টে ইতোপূর্বে কয়েকজন সন্ত্রাসী এসে চাঁদা দাবি করেন, এই বিষয়টি আবির স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করে। ফের স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) সেই সন্ত্রাসীরা রেস্টুরেন্টে এসে সিগারেট নিয়ে টাকা না দিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় আবির বাঁধা প্রদান করলে সন্ত্রাসীরা আবিরের মাথায় ও বুকে তিন রাউন্ড গুলি করে। ঘটনাস্থলে আবিরের মুত্যু হয়। ক্রেতারা এসে মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে হিমাগারে রাখে। এরপর সব প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ দেশে পাঠানো হয়।
খুলনা গেজেট/ এএজে