খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ মাঘ, ১৪৩১ | ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  দৈনিক ভোরের কাগজের প্রধান কার্যালয় বন্ধ ঘোষণা
  সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সংলাপেও নির্বাচন প্রসঙ্গ

গেজেট ডেস্ক

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের এক বছরের বেশি সময় আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলে আসছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে ঢাকা সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি সামনে আনছেন। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের নিরাপত্তা সংলাপেও নির্বাচনের বিষয়টি এসেছে। নির্বাচন সামনে রেখে নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের বিষয়গুলোও মার্কিন কর্মকর্তারা আলোচনায় তুলেছেন। বৈঠকে উপস্থিত কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দুই দেশের নবম নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগ) খন্দকার মাসুদুল আলম। আর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক সামরিকবিষয়ক বিভাগের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিরা রেজনিক।

পরে মিরা রেজনিক পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আলোচনায়ও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চেয়েছেন।

মিরা রেজনিক দুই দেশের নিরাপত্তা সংলাপে যোগ দিতে গত সোমবার ঢাকায় আসেন। ওই দিন তিনি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কেমন তা জানতে চেয়েছেন। বিশেষ করে নির্বাচন সামনে রেখে নিরাপত্তা পরিস্থিতি কেমন এবং এই পরিস্থিতিকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা কীভাবে দেখেন—এসব নিয়ে তিনি তাঁদের কাছে প্রশ্ন রাখেন এবং তাঁদের কথা শুনেছেন।

পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক সামরিকবিষয়ক বিভাগের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিরা রেজনিক পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

নির্বাচন নিয়ে মিরা রেজনিক জানতে চেয়েছেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) জানতে চেয়েছে, আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা বলেছি যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তারা তা দিতে রাজি আছে।’

মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সামগ্রিক নিরাপত্তার কথা যদি বলি, সেখানে তো মানবাধিকার এসেই যায়। সেখানে আমাদের যেসব বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেগুলো আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পূরণ করছি।’

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ইস্যুসহ সব ধরনের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা চায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক যেন আরও গভীরতর হয়। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক—সব দিকেই। আমরাও চাইছি তাদের সঙ্গে সম্পর্কে যেন কোনো দূরত্ব না থাকে।’

আকসা এবং জিসোমিয়ার মতো প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘এখানে সরাসরি জিসোমিয়া-আকসা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়নি। প্রতিরক্ষা সংলাপে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে আমরা বলেছি, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি নিয়ে কাজ আছে। আপনারা জানেন যে কৌশলগত সংলাপে জাপানও আমাদের বিবেচনা করছে। তারা তাদের বিশেষায়িত কর্মসূচি সরকারি নিরাপত্তা সহায়তায় (ওএসএ) আমাদের অন্তর্ভুক্ত করেছে। সুতরাং বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছি।’

র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘র‍্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে তারা আলোচনা করেছে। আমরা বলেছি, প্রতিটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগ আসে, যে প্রতিবেদন আসে, প্রতিটিকেই আমরা বিবেচনায় নিই। আমরা আমাদের দেশে কোনো দায়মুক্তির সুযোগ রাখি না। একটা গুলি খরচ করলেও জবাবদিহি করতে হয়। আমাদের বাহিনীর কেউ কিছু করলে প্রক্রিয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। আমরা র‍্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে লিখিতভাবে জবাব দিয়েছি। তাদের প্রক্রিয়ার মধ্যে সেটি আছে। এ নিয়ে আমরা সজাগ আছি, এখানে দায়মুক্তির কোনো সুযোগ নেই। আমরা চেয়েছি যে বিভিন্ন বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যে সহযোগিতা, সেটা যেন অব্যাহত থাকে। র‌্যাবের ওপর আপাতত নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু আমাদের পুলিশ বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড এদের সবার সঙ্গে তাদের সহযোগিতা আছে। দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা আছে, সেগুলো অব্যাহত থাকবে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) চায় না, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কোনো সুনির্দিষ্ট একটি দেশ আধিপত্য বিস্তার করুক, তারা চায় সমুদ্র অবাধ ও মুক্ত থাকুক।

বৈঠক শেষে প্রচারিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তা সংলাপে বাংলাদেশের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দৃষ্টিভঙ্গি, যুক্তরাষ্ট্রের ভারত-মহাসাগরীয় কৌশল, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, নিরাপত্তা সহায়তা, প্রতিরক্ষা বাণিজ্য ও সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থা মোকাবিলাসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রথাগত ও অপ্রথাগত নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে নিরাপত্তা সহযোগিতাকে সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, তথ্য আদান-প্রদান এবং যৌথ মহড়ার মাধ্যমে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে মার্কিন পক্ষ বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের আহ্বানে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকটের চূড়ান্ত সমাধান হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ সমস্যা সমাধানে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সমর্থন চেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা সম্প্রসারণে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!