যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া যেসব পণ্যে শুল্ক কমানো সম্ভব, সেসব চিহ্নিত করে একটি তালিকা প্রস্তুত করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শুল্কছাড়ে যেসব পণ্যের আমদানি বাড়বে কিন্তু বাংলাদেশের রাজস্ব খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না প্রাথমিকভাবে এমন পণ্যগুলোকেই তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। রবিবার (৬ এপ্রিল) বাণিজ্য সচিব মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এনবিআরের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। বৈঠকে রপ্তানিকারক, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারাও অংশ নেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) প্রাথমিক এক বিশ্লেষণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত ৩০টি পণ্যে তুলনামূলকভাবে উচ্চ শুল্কহার চিহ্নিত করেছে।
এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে জেনারেশন ও জেনারেটিং সেট, ভালভ, গরুর মাংস, কৃষিপণ্য, কিছু কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি। এসব পণ্যের ওপর প্রযোজ্য শুল্কহার ২৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর গড় প্রভাবিত শুল্কহার বাংলাদেশে ৫ শতাংশেরও কম।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের প্রধান আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে তুলা, স্ক্র্যাপ, বোয়িং বিমানের যন্ত্রাংশ ও মূলধনী যন্ত্রপাতি—যেগুলোর বেশিরভাগই শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাঝে মাঝে উচ্চমূল্যের গাড়িও আমদানি করে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরে দেশটি থেকে মাত্র ৫টি গাড়ি আমদানি করা হয়েছে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বৈঠকে জানান, যেসব পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানো সম্ভব এবং তাতে রাজস্ব আহরণে বড় প্রভাব পড়বে না, এমন পণ্যের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এসব পণ্যে শুল্ক হ্রাস বা শূন্য করার বিষয় বিবেচনায় রয়েছে।
তারা জানান, শুধু যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে এককভাবে শুল্ক কমানো যাবে না, কারণ অন্য দেশগুলোও একই সুবিধা চাইবে। তাই এমন পণ্য চিহ্নিত করা হচ্ছে, যেগুলো শুধু যুক্তরাষ্ট্র থেকেই বেশি আমদানি হয়।
এ প্রসঙ্গে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, আন্দাজে বা অনুমানে শুল্ক কমালে চলবে না। যুক্তরাষ্ট্র কী চায়, তারা কোন কোন পণ্যে শুল্ক ছাড় চায়—তা জেনে, আলোচনার মাধ্যমে এগোতে হবে। নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে শুল্ক ছাড় দিলে যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করা যাবে না।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির পরিমাণ বাড়াতে এবং দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও মজবুত করতে একটি গুদাম দ্রুত নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি, ট্রাম্প আমলে আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক যেন সাময়িকভাবে কার্যকর না হয়, সে লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বৈঠকে অংশ নিয়ে বাণিজ্য বিশ্লেষক ড. এম এ রাজ্জাক জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির জন্য একটি গুদাম নির্মাণের পরিকল্পনা আগেই নেওয়া হয়েছিল, তবে বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি ছিল না। এখন সেই সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সরকার মনে করছে, এই গুদাম দ্রুত নির্মাণ করা হলে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি ইতিবাচক বার্তা দেওয়া যাবে।’
তিনি জানান, বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে দ্রুত একটি চিঠি পাঠানোর সুপারিশ করেছেন, যাতে তিন মাসের সময় চাওয়া যায় আলোচনার সুযোগ তৈরির জন্য। চিঠিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কী ধরনের বাণিজ্য সুবিধা দেওয়া হতে পারে, সে সংক্রান্ত একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপও সংযুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে।
খুলনা গেজেট/ টিএ