যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের (কোভিড ১৯) নতুন ধরন (স্ট্রেইন) ছড়িয়ে পড়ার পর আতঙ্কে পুরো ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ব্রিটেনের সাথে বিমান চলাচল স্থগিত করেছে। আগাম ব্যবস্থা হিসেবে সৌদি আরব আকাশ, সড়ক ও নৌপথে বাইরের দেশ থেকে মানুষের প্রবেশ বন্ধ ঘোষণা করেছে। স্থগিত করা হয়েছে বিদেশিদের ওমরাহ পালন।
যদিও এর আগেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কড়া লকডাউন জারি করা হয়। যারা এখনো লকডাউনের ঘোষণা দেয়নি, তারাও খুব শিগগির লকডাউনের পথে হাঁটবে। ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আকাশপথ, রেলপথসহ সব সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য কার্যত ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এদিকে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন স্ট্রেইন আরও অন্তত চারটি দেশে শনাক্ত হয়েছে। তবে আশার কথা শুনিয়েছেন জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে তিনি বলেছেন, করোনার এই স্ট্রেইনের বিরুদ্ধেও ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি টিকা কার্যকর।
স্থানীয় সময় রোববার রাতে জার্মানির হ্যানোভার শহরের বিমানবন্দরে লন্ডন থেকে আসা ৬৩ জন যাত্রীকে বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। একটি আলাদা টার্মিনালে তাঁদের রাত্রিযাপন ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। সোমবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষার পর তাঁদের বিমানবন্দর ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
জার্মানির প্রখ্যাত অনুবিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান ড্রস্টেন জার্মান সংবাদমাধ্যম ডের স্পিগেল-এ সাক্ষাৎকারে বলেন, এখন পর্যন্ত জার্মানিতে যুক্তরাজ্যের মতো নতুন স্ট্রেইনের করোনাভাইরাসের নমুনা শনাক্ত করা যায়নি। কিন্তু জার্মানিসহ অন্যান্য দেশেও তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ক্রিশ্চিয়ান ড্রস্টেন ও অন্যান্য জিন তত্ত্ববিদের মতে করোনাভাইরাসের যে বিভিন্ন রূপ রয়েছে, তার মধ্যে এই পরিবর্তিত রূপটি প্রধান গোষ্ঠী। সুইজারল্যান্ডের বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুবিজ্ঞানী ও মিউটেশন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রিচার্ড নেহার বলেন, যুক্তরাজ্যে রূপান্তরিত করোনাভাইরাসটি কয়েক মাস ধরেই সক্রিয় ছিল। করোনাভাইরাস নিয়ে নিবিড় ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের সময় গত ২০ সেপ্টেম্বর এটি আবিষ্কৃত হয়, যা গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি অংশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে নতুন পরিস্থিতিতে সময় নষ্ট না করে দ্রুত সমন্বিত সিদ্ধান্তের জন্য ইউরোপীয় কাউন্সিলের ২৭ সদস্যদেশের সঙ্গে অনলাইনে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল। বৈঠকের মূল বিষয় হলো করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বয়। যুক্তরাজ্যের ইইউ জোট ছাড়ার ১০ দিন আগেই রূপান্তরিত করোনাভাইরাসের আতঙ্কে স্থানীয় সময় রোববার মধ্যরাত থেকে আয়ারল্যান্ড, হল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইতালি, অস্ট্রিয়াসহ আরও কিছু দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করেছে।
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী সমুদ্রতলদেশের প্রায় ৫০ কিলোমিটারের ইউরো টানেল ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ডোভার ও ফ্রান্সের কালে শহরের মধ্যে ফেরি টার্মিনালটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইইউ দেশগুলির শুল্কমুক্ত বাণিজ্য শেষ হওয়ার ১০ দিন আগে শত শত পণ্যবাহী লরি ফেরিঘাটে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে আটকা পড়েছে। ইইউ দেশগুলো থেকে যুক্তরাজ্যে ৭০ শতাংশ সবজিজাতীয় পণ্য এই পথে পরিবহন করা হয়।
যুক্তরাজ্য সরকারের একজন মুখপাত্র উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রূপান্তরিত করোনাভাইরাসটি আগের ভাইরাসের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক এবং তা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত দুরূহ। রোববার পর্যন্ত রূপান্তরিত ভাইরাসটি যুক্তরাজ্যের বাইরে ডেনমার্কে ৯ জন এবং ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়ায় ১ জন করে মোট ১২ জনের শরীরে শনাক্ত হয়েছে।
এদিকে জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাজ্যে শনাক্ত করোনার নতুন ধরনের বিরুদ্ধে বিদ্যমান টিকা কার্যকর। ইইউ বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে মধ্যকার আলাপ-আলোচনার বরাত দিয়ে ইয়েন্স স্পান বলেন, তাঁরা এখন পর্যন্ত যা জানেন, সে অনুযায়ী বিদ্যমান টিকার ওপর করোনার নতুন ধরনের কোনো প্রভাব নেই, যার অর্থ করোনার নতুন ধরনের ক্ষেত্রেও বিদ্যমান টিকা কার্যকর। এ প্রসঙ্গে জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশেষ করে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার কথা উল্লেখ করছিলেন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে ইতিমধ্যে এই টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম