খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ পৌষ, ১৪৩১ | ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট
  চাঁদপুরে জাহাজে ৭ জনকে হত্যা: আসামি ইরফান ৭ দিনের রিমান্ডে

যা বল‌লেন খা‌লেদা জিয়ার সা‌বেক প্রেস সে‌ক্রেটা‌রি

মারুফ কামাল খান

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রেসসচিব-এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে আমাকে বিএনপির তরফ থেকে যে চিঠি দেয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার ব্যাপারে আমি নিরুৎসাহিত করেছিলাম। তবু অনেকে মন্তব্য করেছেন। আবেগের আতিশয্যে কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কিছুটা কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্যও করেছেন। মানুষ পাথর নয়।তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থাকে, আবেগাক্রান্ত হয়। সময়ে এটা থিতিয়ে যাবে আশা করি।

আমি সকলের ভালোবাসায় অভিভূত। আলাদা করে সকলের মন্তব্যের জবাব দিতে না পারায় দুঃখিত। খুব অস্বাভাবিক এক সময়ে ম্যাডাম খালেদা জিয়ার প্রেসসচিব হিসেবে আমার দায়িত্ব গ্রহন ও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের গল্প সুযোগ পেলে আগামীতে কখনো বলব। তবে একটা কথা বলে রাখি, এটা কোনো চাকরি নয়, দলীয় পদও নয়, স্রেফ ম্যাডামের ইচ্ছাধীন একটা রাজনৈতিক সিলেকশন ছিল। আমাকে কেউ কোনো নিয়োগপত্র দেয় নি, শর্তও নির্ধারণ করে দেয় নি। সব ছিল মুখে মুখে, বিশ্বাস ও আস্থার ভিত্তিতে। আমি এই দায়িত্বপালনের বিনিময়ে কখনো কোনো পারিশ্রমিক, মায়না বা সম্মানি নিই নি

আমি একজন সামান্য লেখক-সাংবাদিক। আমার আগে জনাব আহমেদ নজির, আনোয়ার জাহিদ ও রিয়াজউদ্দীন আহমদের মতন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা একইভাবে এই রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাদের কারো পরিচিতি ছিল সচিব, আবার কারো পরিচিতি উপদেষ্টা হিসেবে ছিল। এই দায়িত্বের বাইরে তাদের কেউ দলীয় পদে ছিলেন, কেউ ছিলেন না। আমাকে প্রেসসচিব পদের বাইরে দলীয় পদ নেয়ার কথা বললেও আমি তা নিইনি। আমার নিজের সীমাবদ্ধতার কথা বুঝেই আমি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যেই নিজেকে সীমিত রেখেছি।

বেগম খালেদা জিয়ার মিডিয়া কাভারেজ দেখভাল এবং তাঁর বক্তব্য-বিবৃতি ও লিখিত ইন্টারভ্যুর জবাবের মুসাবিদা করার ব্যাপারে আমার ওপর অর্পিত এই দায়িত্ব পালনে আমার সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়ন অন্যরা করছেন, করবেন। এ নিয়ে আমার মন্তব্য করা অনুচিত হবে। আমি নিজের ঢোল নিজেই পেটানোকে খুব অরুচিকর প্র‍্যাকটিস বলে মনে করি। ১/১১এর সময় আমি বিবেকের তাড়নায় ও আদর্শবোধের তাগিদ থেকে যেটুকু করেছি, সে ব্যাপারেও নিজের কৃতিত্ব জাহির করাটাকে আমি অনুচিত মনে করি। তবে সময় সুযোগ হলে সে সময়কার অপ্রকাশিত অনেক ঘটনাবলী কখনো লিখে জানাব।

আমাকে দেয়া বিএনপির চিঠির টেকনিক্যাল ও পদ্ধতিগত দিক এবং এতে চয়ন করা শব্দ ও বাক্য নিয়েও আমার কোনো আপত্তি নেই। কারণ আমি একটি ক্লোজড চ্যাপ্টারকে ডিসেকশন না করাই উচিত বলে মনে করি। আমি এর পুনর্বিবেচনাও চাই না এবং ব্যক্তির মূল্যায়নের চেয়ে দল-রাজনীতির সাফল্যকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করি।

আমি আন্তরিক ভাবেই বিশ্বাস করি, কোথাও কেউ অপরিহার্য নয়। এক দায়িত্বে কেউ অনন্ত কাল থাকেও না। আমি প্রত্যাশা করি, এই পরিবর্তন রাজনীতি ও দলের জন্য কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ও কল্যাণ বয়ে আনবে। কারো প্রতি কোনো ব্যাপারেই আমার কোনো অভিযোগ বা অনুযোগ নেই। আমার মতন একটা সামান্য মানুষের প্রতি অপরিসীম আস্থা রেখে আমাকে অপ্রাপ্য সম্মানে ভূষিত করায় আমি বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ। আমি দায়িত্বপালন কালে যাদের আন্তরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও ভালোবাসা পেয়েছি দলের সর্বস্তরের সেই সকল নেতা-কর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ী এবং চেয়ারপার্সন অফিসের নিবেদিত প্রতিটি কর্মীকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে, স্বাভাবিক সময়ে তো বটেই, ক্ষমতাসীনদের দ্বারা চরম ভাবে আক্রান্ত হবার দিনগুলোতেও আমার প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা ও আমার সহকর্মীরা মস্ত ঝুঁকি নিয়ে রাত-দিন পরিশ্রম করে আমাকে পরম ধন্য ও কৃতার্থ করেছেন। তাদের ভূমিকার কথা আমার পক্ষে আমৃত্যু ভোলা সম্ভব নয়।

আমি আবারো বলি, অব্যাহতির ব্যাপারটাকে আমি দারুণ পজিটিভলি নিয়েছি। আমার মন একরত্তিও খারাপ হয়নি। আমি মনে করি অনেক সময় আশীর্বাদ আসে অভিশাপের মুখোশ পরে। আমার কাছে এটা পুরোই আশীর্বাদ বলেই মনে হচ্ছে। মানবিক দায়বোধ থেকে অনেক সময় অনেক দায়িত্ব নিজে থেকে ছাড়া যায় না। সেখান থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অব্যাহতি মিললে সে তো এক পরম স্বস্তির মুক্তি। আমি সেভাবেই দেখছি। এ এক অনুপম স্বাধীনতা।

আমি যার জন্য কাজ করতাম, তিনিই বেড়াজালে পড়ে বাধ্যতামূলকভাবে আজ সম্পূর্ণ নিষ্ক্রীয় হয়ে আছেন। কাজেই আমার এমনিতেই কাজ ছিলনা। এ অবস্থায় আদর্শগত বিশ্বাস থেকে যা করা দরকার ও সম্ভব, সে লেখালেখিটুকু তো করছিই। বাড়তি যে ‘প্রেসসচিব’ স্টিকারটি আমার গায়ে সেঁটে ছিল, বর্তমান অবস্থায় আমার স্বাধীনতা হরণ ছাড়া সেটির আর তেমন কোনো কার্যকারিতাই ছিল না। স্বাধীনতাপ্রিয় একজন মানুষ হিসেবে এটা খুব স্বস্তিকর ছিলনা আমার জন্য। তাছাড়া এটি হয়ে উঠেছিল কোনো কোনো মহলের চরম ঈর্ষা ও বিদ্বেষের উৎস। এ পরিস্থিতি থেকে আমাকে নিষ্কৃতি দেয়ায় আমি সত্যিই আনন্দিত।

মনোদৈহিক স্বাস্থ্যের নানান জটিলতা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে দায়ের করা অসংখ্য মিথ্যা মামলায় আমি জর্জরিত। আর্থিক দৈন্য আমার বরাবরই ছিল, সেটাকে কখনো গ্রাহ্য করিনি, আজও করিনা। তবে শাসকের ক্রোধে আমার পারিবারিক জীবন ছত্রখান হয়ে গিয়েছে। এই সংকট অতিক্রমের লড়াইটা এখন আমাকে একলাই চালাতে হবে, হারজিত অনিশ্চিত। আমি শুধু আপনাদের কাছে দোয়া চাই। কখনো মাথা না নুইয়ে যেভাবে জীবনভর আদর্শিক সংগ্রাম চালিয়েছি, জীবনের বাকি দিনগুলোতে ব্যক্তিগত লড়াইটাও যেন সে ভাবেই চালিয়ে যেতে পারি। (‌ফেসবুক ওয়াল থে‌কে)

খুলনা গেজেট/ টি আই

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!