ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের ২৪২ আরোহীর সবার প্রাণহানির খবরের মাঝে অলৌকিকভাবে ব্রিটিশ এক যাত্রীকে জীবিত উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
আহমেদাবাদের পুলিশ কমিশনার জিএস মালিক দেশটির বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ১১এ নম্বর আসনে বসেছিলেন ওই যাত্রী এবং তিনি জীবিত আছেন। ব্রিটিশ-ভারতীয় ওই নাগরিকের নাম বিশ্বাস কুমার রমেশ।
জিএস মালিক বলেছেন, ওই যাত্রী বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছেন। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। এর আগে এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ বিমানের যাত্রীদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে সেখানে বিশ্বাস কুমার রমেশের নাম রয়েছে। তিনি ব্রিটিশ নাগরিক।
ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম বলছে, তাদের সংবাদদাতারা হাসপাতালে গিয়ে রমেশের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি সাংবাদিকদের নিজের প্লেনের বোর্ডিং পাসও দেখিয়েছেন। সেখানে তার নাম রয়েছে এবং আসন নম্বর উল্লেখ করা আছে ১১এ।
গুজরাটে এই বিমান দুর্ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে সাদা টি-শার্ট ও কালো ট্রাউজারে রক্তের দাগ লাগা অবস্থায় তাকে হাঁটতে দেখা যায়। পায়ে আঘাত পাওয়ায় তাকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায় ভিডিওতে।
ব্রিটিশ-ভারতীয় নাগরিক রমেশ সম্প্রতি গুজরাট সফরে এসেছিলেন। সেখানে ভ্রমণ শেষে যুক্তরাজ্যে ফিরছিলেন তিনি। এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানে তার ভাইও ছিলেন বলে জানিয়েছেন রমেশ। তবে দুর্ঘটনার পর তার সেই ভাইকে আর খুঁজে পাননি তিনি।
দেশটির সংবাদমাধ্যমকে রমেশ বলেছেন, ‘‘আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল বিমাবন্দর থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয় বিমানটি। স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৩৮ মিনিটে আকাশে উড্ডয়নের ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই প্রচণ্ড আওয়াজ হয়। এর পরপরই বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ে। সব কিছু খুব কম সময়ের মধ্যেই ঘটে যায়।’’
আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেছেন, তার মনে হয়েছিল যেন ভূমিকম্প হলো। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) তিনি বলেন, আমি ঘরেই বসে ছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড একটা শব্দ হলো। মনে হলো যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। আমি তখনও জানতাম না বিমান ভেঙে পড়েছে। পরে এখানে এসে জানতে পারি।
দুর্ঘটনাস্থলে এসে দেখি বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। আর সেখানে অনেকের মরদেহ পড়ে আছে।
দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিধায়ক দর্শনা বাঘেলা এএনআইকে বলেছেন, বিমান বিধ্বস্তের সময় তিনি ঘটনাস্থলের কাছেই নিজের দপ্তরে ছিলেন।
‘‘আমি এখানে আমার অফিসে বসেছিলাম। সেখানে বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে গিয়ে দেখি বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রচুর ধোঁয়া বের হচ্ছে। মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় শ্রমিকদের সহায়তায় আমরা অনেককে উদ্ধার করতে পেরেছি।’’
দেশটির বেসরকারি মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানটি বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। এর কিছু সময়ের মধ্যে নিচে নামতে থাকে।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বিমানটি প্রায় ৮২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর হঠাৎ নিচে নামতে শুরু করে। সেই সময় পাইলট বিমানটিকে আবারও ওপরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এরপর বিমানটি নিচে নেমে আসে এবং বিমানবন্দরের কাছের বিজে মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এই ঘটনায় ছাত্রাবাসের অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
ভারতের সিভিল এভিয়েশন দপ্তর বলেছে, বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের ওই বিমানে ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে ২৩০ জন সাধারণ যাত্রী ও বাকি ১২ জন ক্রু।
সূত্র: বিবিসি, এএনআই
খুলনা গেজেট/এএজে