খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

যাকাত আদায়ের সুফল

মুফতি সাআদ আহমাদ

যাকাত ইসলামের মৌলিক ফরজ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয় স্তম্ভ হচ্ছে যাকাত। ঈমানের পর নামাজ এবং তার পরই জাকাতের স্থান। পবিত্র কোরআনের ৩২ জায়গায় জাকাতের কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে ২৮ জায়গায় নামাজ ও জাকাতের উল্লেখ একত্রে করা হয়েছে।

যাকাত আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা, ক্রমবৃদ্ধি, আধিক্য ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে যাকাত হলো, ধনীদের ধন-মাল থেকে আল্লাহর নির্ধারিত হারে উপযুক্ত ব্যক্তিকে দান করা। মহান আল্লাহ সম্পদশালীদের সম্পদ থেকে যাকাত সংগ্রহ করে নির্ধারিত আটটি খাতে ব্যয় বণ্টন করার জন্য ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

যাকাত একদিকে যাকাতদাতার মন ও আত্মাকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে, তার ধন-সম্পদকেও পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করে দেয়; অন্যদিকে দরিদ্রদের অভাব পূরণে সহায়তা করে এবং সম্পদে ক্রমবৃদ্ধি বয়ে আনে।

যাকাত দেওয়া ফরজ। যাকাত না দিলে বা তা অস্বীকার করলে দুনিয়া ও আখিরাতে ভয়াবহ পরিণাম ভোগ করতে হবে। আর যাকাত দিলে মানুষ তার সম্পদের পবিত্রতা ও বৃদ্ধিই অর্জন করবে না, এতে তার পরকালীন মুক্তির পথও সুগম হবে। এ ছাড়া যাকাত সামাজিক জীবন ও জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জাকাতের সামাজিক ভুমিকা সংক্রান্ত কিছু উপমা নিন্মে তুলে ধরা হল।

ক. যাকাত সম্পদ পবিত্র করে : মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তুমি যখন যাকাত দেবে, তখন তা থেকে তার খারাবি দূর করে দিলে। ’ যারা যাকাত দেয়, তারা সব সময় চিন্তা করে যে তার আয় যেন হালাল হয় এবং উপার্জনের মধ্যে যেন কোনো খারাবি না থাকে। এতে যাকাতদাতাদের মধ্যে সম্পদের পবিত্রতা অর্জনের প্রয়াসও সৃষ্টি হয় ।

খ. যাকাত ধনীদের পরিশুদ্ধ করে : পবিত্র কোরআনে সুরা তাওবার ১০৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, ‘আপনি তাদের ধন-সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করে তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে দিন। ’ সম্পদশালীরা যাকাত প্রদানের মাধ্যমে মালের পরিশুদ্ধি লাভের পাশাপাশি তাদের মনেরও পরিশুদ্ধি অর্জন করে। গরিব-দুঃখী ও অভাবী মানুষের মধ্যে যাকাত বণ্টনের মাধ্যমে তারা স্বার্থপরতা থেকে যেমন পরিশুদ্ধ হয়, তেমনি তাদের মধ্যে জন্মলাভ করে সহযোগিতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মনোভাব।

গ. যাকাত দারিদ্র্য দূর করে : জাকাতের আটটি খাত রয়েছে। যাকাত বণ্টনের এই খাতগুলোর মধ্যে ফকির, মিসকিন, দাস-দাসী ও ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি—এই চারটি শ্রেণি হচ্ছে অবহেলিত, পীড়িত ও অভাবগ্রস্ত। যাকাত এদের মধ্যে বণ্টিত হলে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হতে বাধ্য, যা সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূর করে সমাজকে আর্থিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলে।

ঘ. যাকাত উৎপাদন বৃদ্ধি করে : অর্থনীতিতে জাকাতের প্রভাব খুবই উল্লেখযোগ্য। যাকাত গরিব, দুঃখী ও অভাবী মানুষের মধ্যে বণ্টিত হলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে এসব লোকের চাহিদা বাড়ে। চাহিদা পূরণের জন্য স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায় উৎপাদন ও জোগান। এতে চাহিদা, উৎপাদন ও মুনাফাও বেড়ে যায়। ফলে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত হয়। বেড়ে যায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।

ঙ. যাকাত অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে : যাকাত ঠিকমতো আদায় ও বিলি-বণ্টন হলে গরিব ও অভাবীরা সচ্ছল ও উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ পায়। ফলে ধনী-গরিবের বৈষম্য দূরীভূত হয়। যাকাত ধনীদের সম্পদকে গরিবদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। এর ফলে সম্পদ শুধু ধনীদের হাতেই আটকে থাকে না। তাই আল্লাহ তাআলা সুরা হাশরে বলেছেন, ‘সম্পদ যেন শুধু তোমাদের ধনীদের মধ্যে আবর্তিত না হয়। ’

চ. যাকাত সমাজে শান্তি আনে : জাকাতের ওপর অর্থনীতির যে ভিত তৈরি হয়, তাতে ধনী-গরিবের বৈষম্য কমে যায়। সমাজের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর হাতে সম্পদ বণ্টিত হওয়ার ফলে সমাজে থাকে না কোনো বিরোধ। এতে সমাজে আসে শান্তি ও নিরাপত্তা। একটি স্থিতিশীল সমাজ ও টেকসই অর্থনীতি পরিগঠনে তাই জাকাতের ভূমিকা অনন্য।

তাই আসুন, আমরা সবাই সঠিকভাবে যাকাত আদায় করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি। দুনিয়ার লোভ-লালসা ত্যাগ করি। মহান আল্লাহর ভয়াবহ শাস্তি থেকে নিজেদের রক্ষা করি।

খুলনা গেজেট/ এস আই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!