যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দি একজনের দৈনিক তিন বেলা খাবার এবং বিকেলের নাস্তা বাবদ বরাদ্দ দৈনিক মাত্র ৭৩ টাকা। আর এই খাবার নিয়েই বন্দিদের বিক্ষোভ অনেকদিন থেকে। মাত্র ৭৩ টাকায় প্রতিদিন একজন কিশোর কিভাবে নাস্তাসহ তিনবেলা খেতে পারে, তা নিয়েই এখন তদন্ত কর্মকর্তাদের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে বিক্ষোভের রাতে পলাতক তিন কিশোরকে পুলিশ আজো আটক করতে পারেনি।
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দি বিক্ষোভ ও ভাঙচুর ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে পেটভরে খাওয়াসহ তাদের ৪টি দাবি। পাঁচ কর্মদিবসে তদন্ত কমিটি তাদের চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। বন্দিদের দাবিগুলোর মধ্যে নেশাদ্রব্য পাওয়ার মত একটি অযৌত্তিক দাবিও রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
এদিকে অনাকাঙ্খিত ঘটনার সময় পালিয়ে যাওয়া তিনবন্দির খোঁজ এখনও মেলেনি। এছাড়া সোমবারও বিক্ষুব্ধ দুই কিশোর লাঠি হাতে সহকারি পরিচালককে খোঁজ করেছিল বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। এ কারণে সহকারী পরিচালক নিজেই এখন নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন।
এদিকে, বন্দিদের মাথা প্রতি বরাদ্দ অনুযায়ী দুপুরে এক প্লেট ভাত, রাতে এক পিছ রুটি দেয়া হয়। এছাড়া স্বজনদের পাঠানো খাবার বন্দিদের না দিয়ে কর্মকর্তারা খেয়ে ফেলেন ও তাদের পাঠানো টাকা আত্মসাতসহ কয়েকটি অভিযোগ তুলে গত ১০ জুলাই রাত ১১টায় পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করে বন্দি কিশোররা। এসময় তিন বন্দি পালিয়ে যাবার ঘটনা ঘটে। রাতেই ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধ্বতনরা হাজির হন। সবার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। এ ঘটনায় এক বন্দি ও এক পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ তদন্তে উপরোক্ত দাবিগুলো উঠে এসেছে।
পালিয়ে যাওয়া কিশোররা হলো, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমহাতি গ্রামের মৃত আইউব আলীর ছেলে বাপ্পারাজ (১৬), বরগুনার আমতলী থানার উত্তর গদখালি গ্রামের মোস্তফা কাজীর ছেলে শাকিল (১২) ও নাটোরের কান্দিভিটা গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে সোহান (১৬)। তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। পলাতকদের বাড়িতে খোঁজ নেয়া হয়েছে। পুলিশও পলাতকদের আটকে কাজ করছে।
এদিকে, বন্দিদের সাথে কথা বলে তথ্য মিলেছে তাদের দাবি ৪টি। এগুলো হলো, তিন বেলা পেটপুরে খাওয়া, তাদের মধ্যে থেকে সিনিয়র নিযুক্ত করা, অভিভাবকদের পাঠানো সব টাকা তাদের কাছে হস্তান্তর, নিদিষ্ট ক্যান্টিন করে দেয়া, যেখানে কিশোররা পছন্দ মত খাদ্য কিনে খেতে পারে। এছাড়া তাদের কারো একটি অযৌত্তিক দাবি হলো, তাদের জন্য মাদক সরবরাহ করতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারি পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বন্দিরা ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করেছে।
তাদের সব অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে তিনি বলেন, একজন কিশোর বন্দি তিনবেলা খাবার ও বিকেলের নাস্তার জন্য সরকারি বরাদ্দ দৈনিক মাত্র ৮৬ টাকা। তা থেকে ভ্যাট বাদ দিয়ে থাকে মাত্র ৭৩ টাকা। ওই টাকা থেকে তাদের তিনবেলা খাবার ও একবেলা নাস্তা দেয়া হয়। বর্তমান বাজার মূল্যে ওই ৭৩ টাকায় চার বেলা কিশোরদের চাহিদামত খাবার সরবরাহ করা অসম্ভব। স্বাস্থ্য বিবেচনায় শিশু কিশোরদের খাদ্য তালিকা অনুসরণ করলে ওই ৭৩ টাকায় একবেলার খাবার দেয়াও সম্ভব নয়। এসব বিষয় সামনে আনা দরকার।
তিনি আরো বলেন, এ সব ঘটনায় কেন্দ্রে তিনি নিজেও এখন নিরাপতহীনতায় রয়েছেন। তাঁকে খুজতে সোমবার দুই কিশোর লাঠি নিয়ে তার অফিসের সামনে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করেছে।
এ ব্যাপারে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামানকে প্রধান ও একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও একজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে সদস্য করে কমিটি গঠন করা হয়। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কিশোর বন্দি বিক্ষোভে প্রাথমিক তদন্তে মানসম্মত খাদ্য দাবিসহ ৪টি কারণ পাওয়া গেছে। বন্দিদের মধ্যে অনেকেই বাইরে থাকতে নেশাদ্রব্য সেবন করত। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বসেও তারা সেই নেশাদ্রব্য পেতে চায়, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে আরো পরিস্কার হওয়া যাবে।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি