যশোর-বেনাপোল সড়কের পাশের শতবর্ষী ঝুঁকিপূর্ণ গাছ ও ডালপালা অবশেষে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে জেলা পরিষদ। পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক পত্রে গাছগুলো অপসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাভারণ হাইওয়ে থানার ওসি রোকনুজ্জামান রিপন।
দীর্ঘদিন যশোর-বেনাপোল সড়কের শতবর্ষী অনেক গাছ মরে ঝূঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রায়ই এসব গাছ বা গাছের ডালপালা ভেঙে পথচারী বা সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের ওপরে পড়ছে। সম্প্রতি একটি চলন্ত ট্রাকের সামনে গাছের একটি বড় ডাল ভেঙে পড়ে ট্রাকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অল্পের জন্য বেঁচে যান চালক ও হেলপার। এরপর টনক নড়ে প্রশাসন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের।
যশোর-বেনাপোল সড়কটি মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত হওয়ায় এই সড়কের গাছ কাটা না কাটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছে দুটি পক্ষ। গাছ না কাটার পক্ষে হাইকোর্টে একটি রিটও করা হয়। রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যার সমাধান মিলছিল না। কিন্তু ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সড়কের দুই পাশের যেসব গাছ মরে গেছে ও গাছের বড় ডালপালা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সেগুলো অপসরণের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে থানার ওসি।
ওই পত্রে বলা হয়েছে, যশোর সড়ক বিভাগের অধীন যশোর-বেনাপোল (এন-৭০৬) একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক। সড়কের উভয় পাশে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু শতবর্ষী মরাগাছ ও ঝুঁকিপূর্ণ ডাল-পালা রয়েছে। প্রায়ই শতবর্ষী গাছের ডালপালা ভেঙে পথচারী নিহত, আহত ও যানবাহনের ক্ষতি হচ্ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে ঝড় ও বৃষ্টিপাতের ফলে যে কোন সময় এসব মরাগাছ ও গাছের ঝুঁকিপূর্ণ ডালপালা ভেঙে দুর্ঘটনায় জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
চিঠিতে বলা হয়, এ বিষয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা পরিষদকে উক্ত মরাগাছ ও গাছের ঝুঁকিপূর্ণ ডালপালা অপসরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনেকবার বলা হলেও কার্যকরি কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। বর্তমানে জীবনহানির ঝুঁকি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ওইসব মরাগাছ ও গাছের ঝুঁকিপূর্ণ ডালপালা কর্তন, অপসরণ করে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো চত্বরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডাক্তার কাজী নাজিব হাসান বলেন, যশোর বেনাপোল মহাসড়কের পাশের শতবর্ষী ঝুঁকিপূর্ণ মরা গাছগুলো বা ডাল অপসারণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে নিয়মিত ফোন আসে। এই রাস্তাটি হাইওয়ে যশোর বিভাগের এবং গাছগুলো জেলা পরিষদের তাই উপজেলা প্রশাসনের এখানে করণীয় কিছু থাকে না। তদুপরি অভিযোগের পেক্ষিতে জনস্বার্থে জেলা পরিষদের কাছে প্রচলিত আইন ও বিধি মোতাবেক মরা গাছগুলো ও ঝুঁকিপূর্ণ ডাল অপসারণের জন্য অনুরোধ করি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরো জানান, জেলা পরিষদের মালিকানাধীন যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের বেনাপোল হতে নাভারণ পর্যন্ত শার্শা উপজেলা অংশের সড়কের দুই পাশে নয়টি মৃত গাছ এবং ৯৪টি গাছের ডালপালা ঝুঁকিপূর্ণ মর্মে শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) মাধ্যমে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। যে কোন সময়ে এই গাছ বা গাছের ডাল পথচারী ও যানবাহনের ওপর পড়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা আছে।
ডাক্তার কাজী নাজিব হাসান মঙ্গলবার জেলা পরিষদের পত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এ সংক্রান্ত কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তারাই গাছ কাটার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
খুলনা গেজেট/এএজে