আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোর পৌরসভার নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মোহাম্মদ রাসেল চৌধুরী।
তিনি জানান, যশোর পৌরসভার সীমানা নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা সংশোধনের দাবিতে রিট হয় হাইকোর্টে। ওই রিটের শুনানি শেষে যশোর পৌরসভার নির্বাচন আগামী তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। পঞ্চম ধাপে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোর পৌরসভায় ভোট গ্রহণের কথা ছিল। তবে নির্বাচন স্থগিত আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ খুব শিগগিরই আপিল করবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মোহাম্মদ রাসেল চৌধুরী।
এদিকে, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোর পৌরসভায় আগের সীমানায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে ২০ জানুয়ারি। ২১ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। খসড়া ওই তালিকা অনুযায়ী, যশোর পৌরসভায় গত পাঁচ বছরে ভোটার বেড়েছে ১৫ হাজার পাঁচশ’ ৭৭ জন। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, যশোর পৌরসভার কোনো সীমানা বাড়ানো হয়নি। সীমানা বেড়েছে শহরের। সেই কারণে পূর্বের সীমানাই পৌরসভার সীমানা।
এবারই প্রথমবারের মতো যশোর পৌরসভায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে ভোট গ্রহণ করার কথা ছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী, যশোর পৌরসভায় ভোটার হয়েছে এক লাখ ৪৬ হাজার পাঁচশ’ ৯৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৭২ হাজার ৫৫ এবং মহিলা ভোটার রয়েছে ৭৪ হাজার পাঁচশ’ ৪৩ জন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোটার ছিল এক লাখ ৩১ হাজার ২১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৬৫ হাজার নয়জন এবং ৬৬ হাজার ১২ জন মহিলা ভোটার ছিল।
গত ২১ জানুয়ারি একজন নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, প্রতীক বরাদ্দের পর গেজেট প্রকাশিত হবে। তখন যাচাই-বাছাই করা হবে খসড়া ভোটার তালিকা। যাচাই বাছাইয়ে সামান্য সংখ্যক ভোটার কমবেশি হতে পারে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। ইভিএমে ভোট গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় নির্দিষ্ট তারিখের অনেক আগেই এই মেশিন ভোট কেন্দ্রে আসার কথা ছিল। সেখানে মগ ভোটিং (ভোটারদের প্রাকটিস করানো) হবে বলে জানিয়েছিলেন রিটার্নিং অফিসার হুমায়ুন কবির। ইভিএমে কীভাবে ভোটাররা ভোট দিবেন তা হাতেকলমে শেখানোটাই মগ ভোটিং।
যশোর পৌরসভার ভোটারদের বিভ্রান্তি দূর করতে ওইদিন সীমানা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছিলেন জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার হুমায়ুন কবির। তিনি বলেছিলেন, যশোর পৌরসভার সীমানা বাড়েনি কখনো। সীমানা বেড়েছে শহরের। শহর আর পৌরসভা এক না বলে দাবি করেছিলেন তিনি। এ কারণে আগের সীমানায় ভোটগ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন রিটার্নিং অফিসার।
হুমায়ুন কবির বলেছিলেন, চাইলেই পৌরসভার সীমানা বৃদ্ধি করা যায় না। এটি একটি জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। পৌরসভার সীমানা বৃদ্ধি করতে কমপক্ষে আড়াই বছর নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে বলে জানান তিনি। সীমানা বৃদ্ধি করতে হলে প্রতিটি বাড়িতে যেতে হবে। বিন্যাস করতে হবে ওয়ার্ডগুলোর। এটি করতে একাধিক ধাপে কাজ সম্পন্ন করতে হয়। নিয়োগ করতে হবে সীমানা নির্ধারণকারী কর্মকর্তা। যার কোনো কিছু যশোর পৌরসভায় এখনো শুরুই হয়নি বলে জানিয়েছিলেন জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার হুমায়ুর কবির।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি