রাজধানীর আদাবর থেকে নিখোঁজ হওয়া সেই তিন বোনকে যশোর থেকে উদ্ধারের পর আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের দাদির জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসি এই আদেশ দেন।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আজ বিকেলে সাধারণ ডায়েরির মাধ্যমে তিন বোনকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় তাদের দাদির জিম্মায় নেওয়ার আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন এবং মুচলেকা দেওয়ার শর্তে তিন বোনকে তাদের দাদির জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১২ সালে এক দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এ দম্পতির তিন মেয়ে। বাবা একজন স্কুলশিক্ষক, মা গৃহিণী। বিচ্ছেদের পর দম্পতির তিন মেয়ে বসবাস শুরু করে রাজধানীতে থাকা দুই খালার সঙ্গে।
বিচ্ছেদের পর বাবা চলে যান যশোর। মা-খালাদের সঙ্গে জীবন গড়াতে থাকে তাদের। কিন্তু, ২০১৩ সালে তিন বোনের মা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকে আর বাবার সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ ছিল না তিন মেয়ের। তারা দুই খালার সঙ্গে বসবাস শুরু করে।
তিন মেয়ের অভিযোগ, দুই খালা কখনোই তাদের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেননি। এমনকি, কথা বলতেও দিতেন না। তিন বোনের একজন থাকত আদাবরের খালার বাসায়। অপর দুজন থাকত খিলগাঁও এলাকায় আরেক খালার বাসায়।
খিলগাঁওয়ের খালার বাসায় যে দুই কিশোরী থাকত, তারা এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। তাদের এসএসসির পরীক্ষাকেন্দ্র ধানমণ্ডি গার্লস হাইস্কুল। ফলে, পরীক্ষার জন্য তারা খিলগাঁও থেকে আদাবরের খালার বাড়িতে আসে। সেখানে থেকে তারা এরই মধ্যে একটি পরীক্ষাও দিয়েছে।
আগামীকাল রোববার তাদের আরেকটি পরীক্ষা রয়েছে এবং তারা পরীক্ষা দেবে বলে আশা প্রকাশ করছে।
ওই তিন বোন সব সময় আলাদা স্থানে থাকায় তাদের মধ্যে যোগাযোগও কম হতো। কেউ মুঠোফোন চালায় না। কিন্তু, পরীক্ষার সুবাদে তারা তিনজন একত্রিত হয়। অন্যদিকে এর আগে তারা জানতে পারে, তাদের বাবা অনেক অসুস্থ। এর আগেও কয়েকবার স্ট্রোক করেছেন। কিন্তু, প্রায় নয় বছর তারা বাবার দেখা পায়নি। বাবা শয্যাশায়ী, প্যারালাইজড। বিছানায় পড়ে থাকেন সব সময়।
এদিকে খালাদের ওপর তিন বোনের ক্ষোভ রয়েছে। খালাদের কাছে তারা অবহেলার শিকার বলে তাদের অভিযোগ। এসব কারণে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আদাবরের খালার বাসা থেকে তিন বোন কাউকে কিছু না বলে বের হয়ে যায় বাবাকে দেখতে। সেখানেই তারা থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিল।
ওই দিনই আদাবরের খালা সাজেদা নওরীন আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সাজেদা নওরীন ধারণা করেন, তাঁর তিন ভাগ্নি টিকটকে আসক্ত থাকায় কারও প্ররোচণায় বাসা হতে বের হয়ে যেতে পারে। ফলে, এ ঘটনা নিয়ে চারিদিকে তোলপাড় শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের খুঁজতে থাকেন।
সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ জানতে পারে, তিন বোন যশোরের হামিদপুর চলে যায় তাদের অসুস্থ বাবাকে দেখতে। তারপর তেজগাঁও বিভাগের অনুরোধে যশোরের কোতোয়ালি থানা পুলিশ তিন বোনকে থানা হেফাজতে নেয়। আজ শনিবার সকালে তাদের ঢাকায় আনে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ।
খুলনা গেজেট/ এস আই