যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের হাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর পিপি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল লাঞ্চিত হয়েছেন। এতে আহত হয়ে তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন এবং বিচার চেয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে জেলা আইনজীবী সমিতি মঙ্গলবার সকালে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
পুরাতন কসবা ফাঁড়িতে এস আই হেলাল, ইন্সপেক্টর রেজাউল ইসলাম ও মুজিব সড়কের বেশ কয়েকজন ছিন্নমূল হকারের সামনে রোববার রাত সোয়া দশটার দিকে এডভোকেট মুকুল এ হামলার শিকার হন বলে ওই লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী হকারদের বক্তব্য এবং ভুক্তভোগী অ্যাডভোকেট মুকুল জানিয়েছেন, অনেক মহলের আপত্তির মুখেও গত রোজার ঈদের আগে ছিন্নমূল হকারদের অনুরোধে তিনি পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দারের কাছে হকারদের রুটি-রুজির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ও আইনজীবী সমিতির সামনে মুজিব সড়কে কয়েকজন দরিদ্র হকারকে বসার বন্দোবস্ত করে দেন। সে সময় তিনি পুলিশকে কথা দেন, সেখানে কোনো চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী এসে চাঁদা তুলবে না, বা কোনো ধরনের উৎপাত করবে না। সেই থেকে মুজিব সড়কের ফুটপাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু হুট করে রোববার সন্ধ্যায় শাহীন নামে একজন যুবক এসে হকারদের জানায়, তাকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন পাঠিয়েছেন। তাকে ৫ টা দোকান দেয়ার জায়গা দিতে হবে। এই বলে সে বাবু নামে একজন হকারের বিভিন্ন জামা-কাপড় সাজানো টেবিল উল্টে রাস্তায় ফেলে দিয়ে নিজের দুটো টেবিল রেখে জায়গা দখল করে চলে যায়। যাওয়ার সময় বলে যায়, ‘হয় আমাদের দোকান দিতে হবে, নইলে মাসে মাসে চাঁদা দিতে হবে।’ এরপর বাবুসহ অন্য হকাররা তাদের দোকান না খুলে পুরাতন কসবা ফাঁড়িতে যান।
রাতে এস আই হেলাল ফাঁড়িতে বসে উক্ত শাহীনকে ডেকে পাঠান এবং তাকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড না করার আহবান জানান। এসময় পরিস্থিতি জানাতে অ্যাডভোকেট মুকুলকেও ফাঁড়িতে আসার অনুরোধ জানান এস আই হেলাল। তিনি ফাঁড়ির ভেতরে এস আই হেলাল ও ইন্সপেক্টর রেজাউল ইসলামের সামনে ঘটনা শোনার ও বোঝার চেষ্টা করেন।
অ্যাডভোকেট মুকুলের অভিযোগ, এসময় বেশ কয়েকজনকে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ফাঁড়িতে প্রবেশ করেন ও অকথ্য ভাষায় মুকুলকে গালিগালাজ এবং কিল চড় ঘুষি ও থাপ্পড় মারতে থাকেন। এসময় উপস্থিত দু’জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং অ্যাডভোকেট মুকুল হতভম্ব হয়ে পড়েন। পরে এস আই হেলাল ও ইন্সপেক্টর রেজাউল ইসলাম জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনকে নিবৃত করেন। পরে তিনি দ্রুত লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় প্রচন্ড মানসিক কষ্ট ও লজ্জায় কাউকে কিছু না বলেই বেজপাড়ায় নিজ বাড়িতে চলে যান অ্যাডভোকেট মুকুল।
সোমবার দুপুরে মুকুলের আহত চেহারা এবং হাসপাতালে যাওয়া দেখে কয়েকজন কথা বললে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়। এ নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তাদের অনুরোধেই তিনি জেলা আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ করেন বলে জানান। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ আবেদনপত্রটি গ্রহণ করেন। ক্ষুব্ধ আইনজীবীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় ঈদগাহ মোড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে।
এদিকে, এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, তিনি ফাঁড়িতেই যাননি। ফলে এ ঘটনার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, তাকে ঘটনাস্থলে দেখেছে এমন কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। তবে উকিল বারের সামনে মুকুল দোকান বসাতে দিয়ে টাকা আদায় করেন বলে তিনি উল্টো অভিযোগ তুলেছেন। পুরাতন কসবা ফাড়ির ইনচার্জ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, তার অফিসের বাইরে ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি শুনেছেন, তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে তিনি অনীহা প্রকাশ করেন।
খুলনা গেজেট/এএজে