যশোর কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই লিটন মিয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আদালত অবমানার অভিযোগে ওই দুই কর্মকর্তা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে বিচারকের কাছে আবেদন করেন। বিচারক সাইফুদ্দীন হোসাইন তাদের ক্ষমা করে ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্ক করে দেন। এ তথ্য জানিয়েছেন আইনজীবী জিএম কামরুজ্জামান ভুট্টো।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি রাতে যশোর রাজারহাট মোড়ে একটি দ্রুতগতির পিকআপ গাড়ির ধাক্কায় অপর পিকআপে থাকা শাহাবুল মিয়া আহত অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত (ঢাকা মেট্রো ড-১২-১৪৩৬) পিকআপটি জব্দ করে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে শিমুল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত গাড়ি চালককে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। পিকআপটির মালিকানা দাবি করে জিম্বায় নেয়ার জন্য যমুনা ব্যাংক লিমিটেড ও র্যানকন অটোমোবাইলস লিমিটেডের রিকভারি অফিসার রমজান আলী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। পরে আবেদন নামঞ্জুর হলে তিনি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিউ আবেদন করেন। গত ২৭ আগস্ট শুনানি শেষে পিকআপটি আবেদনকারীর জিম্মায় দেয়ার আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক। ১৪ সেপ্টেম্বর জুডিসিয়াল আদালতে জিম্মানামা জমা দেয়া হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর কোতয়ালি থানাকে জব্দকৃত গাড়ি আবেদনকারীর জিম্মায় দেয়ার আদেশ দেয়া হয়। এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর আবেদনকারী কোতোয়ালি থানায় গিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে থানার ওসি মনিরুজ্জামান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা লিটন মিয়া তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। এ টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় গাড়ি দেয়নি থানা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, এ ঘটনার পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা লিটন মিয়া পিকআপটি জিম্বায় না দিয়ে আদালতে একটি লিখিত অবহিতকরণ দরখাস্ত দেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, মামলার মূল আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। এমতাবস্তায় গাড়িটি জিম্বায় দিলে প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। ২৩ সেপ্টেম্বর পিকআপের জিম্মাদার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গোটা বিষয়টি অবহিত করে আবেদন করেন। এ আবেদনের শুনানি শেষে বিচারক রায় দেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আদেশ অমান্য করা আদালত অবমাননার সামিল। ফলে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে মর্মে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে জবাব দেয়ার আদেশ দেন।
মঙ্গলবার ওই দুই কর্মকর্তা আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। বিচারক ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল হলে আর ক্ষমা করা হবে না বলে দু’জনকে সতর্ক করে ক্ষমা করে দেন।
খুলনা গেজেট/এনএম