করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে মানুষকে ঘরে রাখতে গত ১৪ দিনে যশোর পুলিশ ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেছে। এসময়ে তারা ব্যবসায়ীসহ সহস্রাধিক মানুষকে আটক করে থানায় নিয়ে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। একইসাথে যশোর সদর ট্রাফিক বিভাগ ২৭৮টি মোটরসাইকেল আটকের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে।
দেশে প্রতিদিনই করোনা রোগী বাড়ছে, একই সাথে দেশ জুড়ে মৃত্যু আতঙ্ক বিরাজ করছে। খুলনা বিভাগ এ তালিকায় বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে। ভয়ানক এ পরিস্থিতিতে সরকার ১ জুলাই থেকে দেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে। দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। লোকজনকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও মানুষকে ঘরে রাখা যায়নি। তারা নানা অজুহাতে শহরময় ঘুরে বেড়িয়েছে। মৃত্যুভয় তাদের কাছে ছিল তুচ্ছ। এমন পরিস্থিতিতে কঠোরভাবে মাঠে নামে পুলিশ প্রশাসন। ১ জুলাই দুপুর ১২ টায় তারা যশোরের দড়াটানায় কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে প্রশাসন ও পুলিশের কার্যক্রম তুলে ধরে মাইকিং করে।
জানানো হয়, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে শহরের, এমনকি গ্রামেও কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জরুরি কাজ ছাড়া সকলকে ঘরে থাকতে ও নিরাপদ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়। করোনা সংক্রমণ এড়াতে অবশ্যই মাস্ক পরিধান ও জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং নিতান্ত প্রয়োজন ব্যতীত ঘরের বাইরে না হবার আহবান জানানো হয়। আবার ব্যবসায়ীরাও পুলিশের সাথে লুকোচুরি করে দোকান পাট খুলে রাখে। এ কারণে ৩ জুলাই থেকে পুলিশ কঠোর অবস্থানে গিয়ে নির্দেশনা উপেক্ষা করা দোকানী, পথচারী ও ক্রেতাকে থানায় নিয়ে মুচলেকা নিয়েছে। কারো ৪ ঘন্টা, ৫ ঘন্টা, কারো বা সন্ধ্যা পর্যন্ত থানা হাজতে আটকে রাখা হয়। যশোর কোতোয়ালি থানাসহ ৯ থানায় পুলিশ কঠোর লকডাউনে এ কার্যক্রম চালায়। এ দুই সপ্তাহে পুলিশ সহস্রাধিক মানুষকে আটক করে ও লকডাউন মেনে চলার মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়।
একইসাথে যশোর সদর ট্রাফিক পুলিশ লকডাউনের ১৪ দিনে নির্দেশনা মেনে না চলায় ২শ’ ৭৮ টি মোটরসাইকেল আটক করে। গাড়ির মালিকের নামে মামলা দিয়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, কঠোর লকডাউন চলাকালে থানার কয়েকটি টিম কাজ করেছে। পুলিশ নির্দেশনা অমান্যকারীদের আটক করেছে। পরে তাদের মুচলেকা নিয়ে ছাড়া হয়। যাতে সবাই সরকারি নির্দেশনা মেনে চলে।
এ ব্যাপারে যশোর সদর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাহবুব কবীর জানিয়েছেন, কঠোর লকডাউনে ১৪ দিনে ২৭৮টি মোটরসাইকেল, ৪টি পিকআপ ও দুটি ট্রাক জব্দ করা হয়। এসব গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া যশোর শহরে যৌথবাহিনী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ব্যাপক অভিযান পরিচালিত হয়েছে। সেখানেও জরিমানা করা হয়েছে।