যশোরে টানা তিনদিনের মুষলধারের বৃষ্টিপাতে বিভিন্নস্থানের রোপা আমন ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে আগাম সবজির ক্ষেত। ভেসে গেছে হাজার বিঘার মাছের ঘের। শহরের নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িঘর এখনও পানির নীচে।
শহরের শংকরপুর, নাজির শংকরপুর, চোপদারপাড়া, পুরাতন কসবা ঘোষপাড়া ও খড়কী এলাকার মানুষ এখনও পানিবন্দী রয়েছে। ভৈরব নদ থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করায় ইতিমধ্যে ৩০/৪০টি কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে।
শুক্রবার বিকেলে থেকে রোববার রাত পর্যন্ত যশোরে বিরামহীন বৃষ্টিপাত হয়েছে। যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া অফিস রোববার রাতে জানায়, শুক্রবার বিকেল থেকে পরদিন সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত যশোরে ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের দু’দিন রেকর্ড করা হয় ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। তিনদিনে সর্বমোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৬২ মিলিমিটার।
ইতিমধ্যে মুষলধারের বৃষ্টির পানিতে ব্যাপক পরিমাণ জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, রোববার পর্যন্ত যশোর জেলায় ১০ হাজার ১৫০ হেক্টর রোপা আমন ধান ও ৪৫৪ হেক্টর জমির আগাম সবজির ক্ষেত পানির নীচে রয়েছে। বৃষ্টি কমে গেলে পানির নীচে থাকা ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার।
তিনি বলেছেন, চলতি আমন মৌসুমে যশোর জেলায় এক লাখ ৪০ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ হয়েছে। এরমধ্যে রোববার পর্যন্ত ১০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমির ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। আগাম সবজির চাষ হয়েছে সাত হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে পানির নীচে রয়েছে ৪৫৪ হেক্টর জমি। এছাড়া যশোরের বিভিন্ন এলাকায় হাজারো বিঘা মাছের ঘের ভেসে গেছে। এতে মৎস্য চাষিদের ব্যাপক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, সোমবার বিকেল থেকে যশোরে বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়। এ সময়ের পর থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত যশোর শহরের বিভিন্ন এলাকা এখনও পানির নিচে রয়েছে। এসব এলাকার মধ্যে অন্যতম শহরের শংকরপুর, নাজির শংকরপুর, চোপদারপাড়া, পুরাতন কসবা ঘোষপাড়া ও খড়কী। এখানে আজো সড়কে ও মানুষের ঘরে পানি রয়েছে। পৌর এলাকার পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা গোলমেলে থাকায় ওইসব এলাকার পানি কমছে না। নিজ বাড়িতেই মানুষ এখনও পানিবন্দী রয়েছে। তাদের কষ্টের কোন সীমা নেই। এছাড়া, শহরের পুরাতন কসবা ঘোষপাড়া এলাকায় ভৈরব নদ থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করায় ইতিমধ্যে ৩০/৪০টি কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। নদের বালি স্যালো মেশিনের মাধ্যমে প্রভাবশালীরা উত্তেলন করায় নিচে সুড়ঙ্গ হওয়ায় পানির চাপে ভৈরব পাড়ের ওইসব ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে। ওইসব এলাকার মানুষ ভাঙ্গা ঘরবাড়ি নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।
শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ে যশোর পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুন্ডু বলেন, শহরবাসীর জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষ গত শুক্রবার থেকেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা শংকরপুর এলাকার কালভার্টের মুখে দখল করে নির্মিত একটি তেল পাম্পের অর্ধেক অংশ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। আজকালের মধ্যেই শহরের জলাবদ্ধতার নিরসন হয়ে যাবে বলে তিনি দাবি করেন।
খুলনা গেজেট/এনএম