খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ড. শেখ আব্দুল রশিদকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে ২ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮১
  ছয় মামলায় সাবের হোসেনের জামিন, কারামুক্তিতে বাধা নেই
  বাংলাদেশী ৫ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরকান আর্মি
করোনায় আক্রান্ত দু’হাজার ২৭৮ জন

যশোরে পনেরো দিনে ২৯ জনের মৃত্যু

যশোর প্রতিনিধি

যশোরে ক্রমেই লম্বা হচ্ছে করোনায় মৃত্যুর মিছিল। থেমে নেই আক্রান্তের সংখ্যাও। প্রতিদিন নতুন রেকর্ড হচ্ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর। গত ১৫ দিনে যশোরে দু’হাজার ২৭৮ জনের করোনা পজিটিভ হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের।

এদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় যশোরে দুইশ’ ৭৭ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে চার জনের। তারা হলো, ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহবায়ক আশিক (২৬), বাঘারপাড়া উপজেলার ঘোষপাড়া গ্রামের মৃত রহিম মোল্লার ছেলে হোসেন আলী (৫৫), ঝিকরগাছা পৌর এলাকার আবুল কাশেমের স্ত্রী কোহিনুর বেগম (৫৮) ও ঝিকরগাছার ইবাদ আলীর ছেলে মিজানুর রহমান (৬০)। এদের মধ্যে হোসেন আলী ইয়োলেজোনে ও বাকি তিন জনের রেডজোনে মৃত্যু হয়েছে।

সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন জানান, সোমবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে পাঁচশ’ ৬০ জনের নমুনা পরীক্ষায় দুইশ’ ২১ জনের পজিটিভ হয়েছে। খুলনা থেকে দুইটি নমুনায় একজনের শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া, একশ’ ৪৫ জনের অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ৫৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে সদর উপজেলার একশ’ দু’জন। কেশবপুরে চার, ঝিকরগাছায় ছয়, অভয়নগরে ৬০, মণিরামপুরে ১৯, শার্শায় ১৫ ও চৌগাছায় নয় জন রয়েছেন।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরিফ আহমেদ জানান, গত ২৪ ঘন্টায় রেডজোনে ২৩ জন ভর্তি হয়েছেন। বর্তমান চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৯২ জন। ছাড়পত্র নিয়েছে ১৮ জন ও মারা গেছেন তিনজন। ইয়োলেজোনে গত ২৪ ঘন্টায় ৪১ রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৫ জন। ছাড়পত্র নিয়েছে ৩১ জন ও মৃত্যু হয়েছে একজনের।

২০ জুন রাত ১০ টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে বাঘারপাড়ার হোসেন আলী হাসপাতালের ইয়োলোজোনে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন রাত সাড়ে ১০ টায় তিনি মারা যান। ১৯ জুন রাতে করোনা নিয়ে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহবায়ক আশিক রেডজোনে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ জুন সকাল ৮টা ২০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। ১৪ জুন করোনা উপসর্গ নিয়ে চৌগাছার কোহিনুর বেগম হাসপাতালের রেডজোনে ভর্তি হন। ১৫ জুন তার করোনা উপসর্গ দেখা দিলে রেডজোনে রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ জুন গভীর রাতে তার মৃত্যু হয়। ১৯ জুন করোনা নিয়ে ঝিকরগাছার মিজানুর রহমান হাসপাতালের রেডজোনে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ জুন ভোরে তার মৃত্যু হয়।

জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ১৫ দিনে যশোরে দু’হাজার দুইশ’ ৭৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। ভারত থেকে আসা ৬৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালের রেড ও ইয়োলোজোনে একশ’ দু’টি শয্যার বিপরীতে বর্তমানে একশ’ ৩৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এসব রোগীদের চিকিৎসায় ৯ জন ডাক্তার, চারজন কনসালটেন্ট ও ২০ জন সেবিকা রয়েছেন। যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইতিমধ্যে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যে অক্সিজেন গ্যাস রিফিল চালু করা হবে। হাসপাতালে এ মুহূর্তে প্রতিটি সিলিন্ডারে ছয় হাজার আটশ’ লিটার অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতার ৪৮টি সিলিন্ডার মজুদ আছে। চালু রয়েছে তিনটি ভেন্টিলেটর।

ইতিমধ্যে নিবিড় চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার জন্য বেসরকারি সংস্থা সাজেদা ফাউন্ডেশনের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। ফাউন্ডেশনের ১০ জন চিকিৎসক, ১২ জন স্টাফ নার্সসহ আরও ২৭ জন স্টাফ হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। সাজেদা ফাউন্ডেশন সাত হাজার লিটার অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতার একশ’টি সিলিন্ডার সরবরাহ করছে। এ সপ্তাহে মহিলা পেয়িং ওয়ার্ড ও রেডজোনের আওতাভূক্ত করে ৫০ শয্যা বাড়ানো হচ্ছে।

স্থানীয় উদ্যোগে আইসিইউ ইউনিটের আরো পাঁচটি ভেন্টিলেটর শিগরিগরই চালু করার প্রক্রিয়া রয়েছে। ভারত ফেরত যাত্রীদের মধ্যে কোয়ারেন্টাইন শেষে শনাক্তকৃত উপসর্গবিহীন করোনা রোগীদের আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসার জন্য জনতা হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। এ হাসপাতালে ৩০ জনকে রেখে চিকিসা দেয়া সম্ভব হবে।

গত ৫ জুন যশোর পৌরসভার ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৬৬ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর দুটি ওয়ার্ডে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়। পরবর্তীতে বিধিনিষেধ গোটা পৌর এলাকায় বাড়ানো হয়। এছাড়াও অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৮ জন এবং ৬ নং ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ১১ জন হওয়ায় এই দুটি ওয়ার্ডকেও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় আনা হয়েছে।

সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ১৫ জুন যশোর পৌরসভা, সদর উপজেলার চাঁচড়া, উপশহর, আরবপুর, নওয়াপাড়া ইউনিয়ন, ঝিকরগাছা পৌর এলাকা, শার্শা ইউনিয়ন ও বেনাপোল পৌর এলাকার বেনাপোল বাজার এবং অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর এলাকায় বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। পরবর্তীতে বাঘারপাড়া ও চৌগাছা পৌর এলাকায় সাতদিনের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

গত ২৯ মার্চ সরকার ঘোষিত লকডাউন আরোপের পর থেকে যশোর জেলায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাসহ বিভিন্ন অপরাধে ২০ জুন পর্যন্ত এক হাজার চারশ’ ৯৩টি মামলায় ১৪ লাখ দুই হাজার আটশ’ ৮০ টাকা জরিমানা করা হয়। এসময়ে ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!