খুলনা, বাংলাদেশ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ইউক্রেনে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা রাশিয়ার
  কুমিল্লায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ ৪ জনের মৃত্যু, কিশোরগঞ্জে ৩ জন
  সারা দেশে হয়রানিমূলক ও মিথ্যা মামলা হচ্ছে, যা ঠিক নয়: আইন উপদেষ্টা
  ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করে পিএসসির প্রজ্ঞাপন
ধানকাটা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় কৃষক, বায়নাসহ দিতে হচ্ছে বুকিং

যশোরে ধানকাটা শ্রমিকের হাজিরা হাজার টাকা

নিজস্ব প্রতি‌বেদক, যশোর

যশোরে লক্ষাধিক হেক্টর জমির বোরো ধান শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারছে না কৃষক। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন গোটা জেলার চাষীরা। বর্তমানে যশোরাঞ্চলে ধানকাটা শ্রমিকের হাজিরার মূল্য হাজার টাকা। তারপরও এসব শ্রমিক পাচ্ছে না খেত মালিকরা। আগে থেকে বায়না করে তাদেরকে বুকিং দিতে হচ্ছে। আসন্ন ঘূর্ণিঝড় অশনি খেত মালিকদের আরো ব্যস্ত করে তুলেছে। তাদেরকে ঝড়বৃষ্টির আগেই খেতের পাকা ধান ঘরে তুলতে হবে।

সূত্র জানায়, যশোরের আট উপজেলা এলাকায় এবার এক লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। বর্তমানে মাঠের পর মাঠে পাকা ধান বাতাসে দুলছে। এ দুলুনিতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও কপালে রয়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। কারণ এখনই তাদের খেতের ধান কেটে ঘরে তুলতে হবে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এখন চরম সঙ্কট চলছে শ্রমিকের। যা কৃষকরা কোনভাবেই সামাল দিতে পারছেন না। যদিও কোন কোন খেত মালিক এরমধ্যেই তাদের ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। আর বর্তমানে বাকি যারা রয়েছেন তারা ধানকাটা শ্রমিক পাচ্ছেন না।

গ্রামীণ জনপদে এসব শ্রমিকের হাজিরার মূল্য এখন আকাশ ছোঁয়া। তারা যার কাছ থেকে যেভাবে পারছে টাকা আদায় করে নিচ্ছে। ন্যায্যমূল্যের কথা বললে শ্রমিকরা কাজ করবে না বলে জানিয়ে দিচ্ছেন। বর্তমানে গ্রামের মাঠে ধানকাটায় পারদর্শী একজন শ্রমিকের হাজিরার মূল্য এক হাজার টাকা।

এক্ষেত্রেও তাদের শর্ত রয়েছে, তারা সকাল ৭টায় মাঠে গিয়ে দুপুর ১টায় জোহরের আজান দিলেই কাজ শেষ করবে। এরপর তারা বাড়ি ফিরে যাবে, কোন ওজর আপত্তি চলবে না। তারপরও তাদেরকে আগে থেকে অগ্রিম টাকা দিয়ে বুকিং দিতে হচ্ছে। তা নাহলে গ্রামে মিলছে না শ্রমিক। যদিও একটু কম দামে অন্য শ্রেণির শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে। কিন্ত তাদের দিয়ে ধান কাটার কাজ চলে না বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে মণিরামপুর উপজেলার হানুয়ার গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, তার দুই বিঘা জমির ধান এখনো কাটা হয়নি। এ নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কোথাও ধানকাটা শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। যারা রয়েছে তাদেরকে আগে থেকে বুকিং দিতে হচ্ছে। শ্রমিকরা সময় দিলে সেই দিনেই তার ধান কাটতে হবে। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হাজিরায় তাদেরকে কমপক্ষে এক হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। এরপর শ্রমিকরা দ্বিতীয় দফায় দুপুর ২টা থেকে মাগরিবের আজান পর্যন্ত অন্যত্র কাজে যাচ্ছে। ফলে একদিনে তারা দু’দফায় ধানকেটে রোজগার করছে।

একই কথা জানান সদর উপজেলার সিরাজসিংহা গ্রামের আতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, ঈদের আগে ৮শ’ টাকায় ধানকাটা শ্রমিক মিললেও এখন এক হাজার টাকার নীচে পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও তাদের মর্জি মোতাবেক কাজে নিতে হচ্ছে। খেতের ধান ঘরে না উঠা পর্যন্ত তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই বলে তিনি জানান। ঈদের দিনে বৃষ্টির পর তাদের এ চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ এদিন মাঠে তাদের কাটা ধান বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে। কোন খেতের ধান পানিতে ডুবে ছিল বলে তিনি জানান।

এদিকে, আন্দামান সাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় আসান যশোরাঞ্চলের কৃষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। আবহাওয়ার সতর্কতার খবর এখন মানুষ আগেভাগেই জানতে পারছে। এ কারণে ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টিপাত শুরুর আগেই কৃষকরা তাদের খেত থেকে বোরো ধান ঘরে তুলে নেবার প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফরে তারা শ্রমিকের দ্বারস্থ হচ্ছেন। আর একসাথে সবার চাপে পড়ে শ্রমিকরা কৌশলে তাদের মুজুরি বাড়িয়ে দিয়েছে।

মণিরামপুরের হানুয়ার গ্রামের ধানকাটা শ্রমিক আবু বক্কার বলেন, বছরের এই সময়ে ধানকাটা শ্রমিকের চরম সঙ্কট শুরু হয়। আর এ সময়ে তীব্র রোদে পুড়ে ফাঁকা মাঠে দাড়িয়ে ধানকাটা মানুষের জন্য কঠিন কাজ হয়ে দাড়ায়। এ জন্য তারা মুজুরি কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। জমির মালিকরা ধণী মানুষ, এবার তাদের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে তারা শ্রমিকদের কিছু টাকা বেশি দিলে কোন ক্ষতি হবে না।

এদিকে, ধানকাটা শ্রমিক সঙ্কটের পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। ইতিমধ্যে যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের উত্তর ললিতাদহ গ্রামের যুব সমাজ স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছে। ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে শনিবার ৫০/৬০ জন গ্রামবাসী ১০ বিঘা জমির ধান কেটে দিয়েছে। যা ইউনিয়নের মানুষের মাঝে সাড়া ফেলেছে।

এসব ব্যাপারে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে যশোরে কৃষকের ৩০ ভাগ ধান ঘরে উঠে গেছে। বাকি সত্তর ভাগ লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে পাকা ধান এখনও মাঠে রয়ে গেছে। আগামী ১০ দিন সময় পেলে মাঠের পুরো ধানই ঘরে উঠে যাবে। এটা হলে কোন সমস্যা হবে না । তবে ধানকাটা শ্রমিক সঙ্কটে হিমশিম খাচ্ছে গোটা জেলার কৃষক বলে তিনি জানান।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!