যশোরে এক হতভাগ্য কিশোরীকে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করেছে তার সৎ বাবা। এর আগে তার ওপর পাশবিকতাও চালায় সে। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার রাত ১১টার দিকে। পরদিন সোমবার সকালে সদর উপজেলার সাতমাইল এলাকায় রেল লাইনের পাশ থেকে ওই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরবর্তীতে ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে সৎ বাবাকে আটক করেছে। পুলিশের কাছে হত্যার বর্ণনা দিয়েছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার দড়িয়াপাড়া গ্রামের নরপশু সৎ বাবা মিন্টু শেখ।
হত্যার শিকার কিশোরীর মা জানান, আঁখিকে চৌগাছার বলুহ দেওয়ানের মেলায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মিন্টু রোববার সকালে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। পরে বাড়িতে ফিরে মিন্টু বলে আঁখি অন্য ছেলের সাথে প্রেম করে চলে গেছে।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মিন্টুকে আটকের পর সে হত্যার কথা স্বীকার করে। মিন্টু জানায়, প্রথমে তাকে চৌগাছায় মেলায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে মেয়েকে যশোরের স্টেশন এলাকার হোটেল বৈকালীতে বাবা-মেয়ে পরিচয়ে দুপুর একটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত থাকে। ওইসময় সে তাকে ধর্ষণ করে। পরে যশোর শহর ঘুরে রাত আটটার পর রেল স্টেশনে যায় তারা। এরপর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের পাশের একটি ঝোঁপের মধ্যে নিয়ে আবারও তাকে ধর্ষণ করে মিন্টু। পরে রাত ১১ টায় খুলনা থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটিগামী সীমান্ত এক্সপ্রেসে ওঠে তারা। সাতমাইল এলাকায় পৌঁছালে ট্রেনের গেটে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় কিশোরী মেয়েকে। এরপর বাড়ি ফিরে মিন্টু জানায়, মেলা থেকে মেয়ে পালিয়ে গেছে। ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এভাবে হত্যার বর্ণনা দেয় নরপশু মিন্টু।
১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে যশোরের সাতমাইল এলাকায় একটি ফিলিং স্টেশনের অদূরে রেল লাইনের পাশে অজ্ঞাত এক কিশোরীর (১৪) রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। লোকজন জড় হলেও মরদেহটি শনাক্ত হয়নি। পরে যশোর কোতোয়ালি থানা ও জিআরপিতে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার ও মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ হলে তদন্ত শুরু করে। এ ঘটনায় গোয়েন্দা শাখার অভিযানিক অফিসার এসআই মফিজুর রহমান তদন্ত চালান ও অপরাধী শনাক্ত করেন।
এরপর যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) বেলাল হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক-সার্কেল জুয়েল ইমরানসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিশোরীকে স্থানীয়রা কেউ চিনতে না পারায় পুলিশ প্রথমে তার পরিচয় শনাক্ত করে। একপর্যায়ে দুপুরের দিকে জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি টিম নিশ্চিত হয় নিহত কিশোরীর নাম। পরে ডিবি পুলিশ তার বাড়িতে গিয়ে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সৎ মেয়ের ওপর চালানো নির্যাতনের কথা জানায় মিন্টু। ওইসময় তাকে আটক করা হয়।
এদিকে, রেলস্টেশন এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, সোমবার রাত ৮টার পর ঘাতক মিন্টুকে নিয়ে ওই এলাকায় যায় ডিবি পুলিশ। পরে হোটেল বৈকালীতে গিয়ে মিন্টুর কথার সত্যতা পায়। স্থানীয়দের সামনেই মিন্টু সবকিছু স্বীকার করে।
খুলনা গেজেট/এনএম