খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ
দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন

যশোরে তিন কিশোর হত্যা মামলায় রিমান্ডে ৫ কর্মকর্তা

যশোর প্রতিনিধি

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোর হত্যায় আটক পাঁচ কর্মকর্তাকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন এক ব্রিফিংয়ে এ ঘটনাকে অমানুষিক ও পৈশাচিক উল্লেখ করেছেন। সন্তান হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও র‌্যাবের কাছে মামলা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে স্বজনরা।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার দুপুর ১২টায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন গণমাধ্যম কর্মীদের ব্রিফ করেন। এসময় তিনি জানান, তিন কিশোর বন্দি হত্যার ঘটনায় কয়েকজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর পাঁচ জনকে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন, ওই কেন্দ্রের বরখাস্ত হওয়া সুপার (সহকারী পরিচালক) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলর (প্রবেশন অফিসার) মুশফিকুর রহমান, শরীর চর্চা শিক্ষক ওমর ফারুক ও কারিগরি শিক্ষক শাহানুর আলম। নির্মম এ ঘটনাকে তিনি অমানুষিক ও পৈশাচিক বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় ১৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই ৫ জন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে প্রমান পাওয়া গেছে।

ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের হেড ক্লার্ক নুরুল ইসলাম বন্দি হৃদয়ের কাছে চুল কাটতে যায়। কিন্তু হৃদয় তাকে চুল কাটতে রাজি না হওয়ার কারণেই এ নির্মম ঘটনার সূত্রপাত হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। পরে নুরুল ইসলাম তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। একই সাথে হৃদয় ও আরেক বন্দি পাভেলকে নিয়ে মাদকসহ নানা ধরণের অভিযোগ আনেন তিনি।

এসব কথা নাইম নামে আরেক বন্দি শুনে হৃদয়কে জানিয়ে দেয়। হৃদয় জানার পর ৩ আগস্ট নুরুলকে সবাই মিলে মারপিট করে। এ ঘটনার ১০ দিন পর ১৩ আগস্ট কর্তৃপক্ষ মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেন জড়িতদের শায়েস্তা করতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বন্দিদের শনাক্ত করে প্রতিষ্ঠানের ডরমিটরিতে ডেকে এনে ১৮ জনকে বেধড়ক মারপিট করে।

এসময় প্রতিষ্ঠানের আরো ৭/৮ জন পুরাতন বন্দি কর্তৃপক্ষের সাথে যুক্ত হয়ে নির্মমভাবে তাদেরকে পিটিয়ে ফেলে রাখে। তাদেরকে চিকিৎসাসেবাও দেয়া হয়নি। এরমধ্যে একজন মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। এসময় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতাল থেকে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। পরে পুলিশ সুপার নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় অন্তত ১২/১৩ জন বন্দি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে ডরমিটরিতে শুয়ে আছে। পুলিশ ভ্যানে করে তাদেরকে হাসপাতালে আনা হয়। এর মাঝে আরো দুইজনের মারা যায়। এ ঘটনায় ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়া হয়। এছাড়া আরো নয়জনের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।

ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোটা ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছে। জড়িতরা কেউই ছাড় পাবে না। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম, গোলাম রব্বানী শেখ।

এদিকে থানা সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতে নিহত পারভেজ হাসানের পিতা রোকা মিয়া যশোর কোতয়াালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর ৩৫। মামলায় তিনি অজ্ঞাত কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করেন। এ মামলায় ওই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁচড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর রকিবুজ্জামান।

শনিবার তিনি ৫ আসামিকে আদালতে চালান দিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহাদী হাসান এদের মধ্যে বরখাস্ত হওয়া সুপার (সহকারী পরিচালক) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলর (প্রবেশন অফিসার) মুশফিকুর রহমানকে ৫ দিন ও শরীর চর্চা শিক্ষক ওমর ফারুক ও কারিগরি শিক্ষক শাহানুর আলমকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে, এ ঘটনায় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি শনিবার থেকে কাজ শুরু করেছে। তারা এদিন যশোর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সাথে কথা বলেন। এরপর ঘটনাস্থল শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে যান তারা। তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রধান হচ্ছেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবুল লাইছ। এছাড়া সদস্য সচিব সমাজসেবা অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক অসিত কুমার সাহা ও সদস্য করা হয়েছে জেলা পুলিশ সুপারের একজন প্রতিনিধি । কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

এরআগে সমাজসেবা অধিদপ্তর দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। ওই কমিটির প্রধান করা হয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) সৈয়দ মোহাম্মাদ নুরুল বসিরকে। তার সাথে তদন্তকাজে সহায়তা করবেন উপপরিচালক (প্রতিষ্ঠান-২) এসএম মাহমুদুল্লাহ। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়।

 

খুলনা গেজেট / নাফি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!