যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) লিফট অপারেটর পদে নিয়োগ পরীক্ষা দিতে গিয়ে ১৭ চাকরি প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। অপহরণের শিকার চাকরি প্রার্থীদের দাবি, বৃহস্পতিবার পরীক্ষা দিতে যাবার সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে তাদের ধরে নিয়ে যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে আটকে রাখা হয়। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে প্রায় ৬ ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অপহরণের মামলাসহ সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠোর শাস্তির কথা জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন।
।। ছাত্র হোস্টেলে আটকে রাখা হয় হলেও খুঁজে পায়নি হল প্রভোস্ট ।।
এদিকে, অপহরণের ঘটনায় দুপুর ১২টা দিকে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. আশরাফুজ্জামান জাহিদ হলে তল্লাশি চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানান, হলে কোনো অপহৃত ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু অপহৃত চাকরি প্রার্থীরা জানান, তারা বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত হলের ৩০৪, ৩০৯ নম্বর রুম ও পাঁচতলার বিভিন্ন কক্ষে আটকা ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে হল প্রভোস্টেকে ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।
অপহরণের শিকার এ চাকরি প্রার্থী সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ইজিবাইক থেকে নামার সাথে সাথেই আমাকে ধরে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৩০৯ নম্বর রুমে নিয়ে বলা হয়, তোরা পরীক্ষা দিতে আসছিস, এডমিট কার্ড কোথা থেকে পাইলি? ওই রুমে আমিসহ ৬ জন চাকরি প্রার্থী ছিলাম। এছাড়া হলের ৩০৪ নম্বর রুম ও পাঁচতলার একাধিক রুমে তিনিসহ প্রায় ২০ জনের মতো আটক ছিলাম। আমি বের হতে চাইলে আমাকে মাথায় ও নাকে-মুখে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারা হয়। আমার চেয়ে রুমের অন্যান্য পরীক্ষার্থীকে অনেক বেশি তারা মারধর করেছে। এরপর সাড়ে ৩টার দিকে ওরাই (অপহরণকারীরা) পালবাড়িমোড়ে নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।
আরেক পরীক্ষার্থী জনান, আমাকে মেইন গেট থেকে ধরে ৩০৪ নাম্বার রুমে নিয়ে যায়। বলে তুমিতো অনেক ভালো ছেলে। নাস্তা হবে, ডিনার হবে, বাসায় ফোন দিয়ে বলো ভাইয়েরা আছে খুব ভালো ব্যবহার করছে। এখানে কয়েকদিন থাকলেও সমস্যা নাই। কিছুু সময় পর পাশের কক্ষ থেকে একজন বলে চাকরি বড় নাকি জীবন বড়? তারপর আমি ওয়াশরুমে যাই, ফিরে এসে বলি পরীক্ষা দেবো। তখন তারা বলে যাও তুমি পরীক্ষা দাও। তখন তার মোবাইল ফোন রেখে পাঠিয়ে দেয়, বলে পরীক্ষা শেষে প্রধান ফটক থেকে ফোন নিয়ে চলে যাবি। তবে অন্য সবাইকে আটকে রেখে আমাকে কেনো ছাড়লো সেটা আমি জানিনা।
একজন পরীক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমি সকাল সাড়ে ৯টার সময় পরীক্ষার জন্য আমার মেয়ের জামাই আরিফুল ইসলামকে নিয়ে যাই। তখন কিছু ছেলে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের ভেতর থেকে জামাইকে ক্যান্টিনের দিকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ পাই। দীর্ঘক্ষণ তার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে আমি রেজিস্ট্রার স্যারের কাছে অভিযোগ জানাই। পরবর্তীতে উপাচার্য স্যারকেও অভিযোগ করি। কিন্তু তাদের তেমন কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল বলেন, অপহরণের বিষয়ে আমি অবগত নই, আমাদের কাছে এ রকম কোন অভিযোগ আসেনি। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কোন কর্মী এর সাথে জড়িত না। কে বা কারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে এ রকম অপকর্ম করে থাকতে পারে। যদি ছাত্রলীগের কোন কর্মী এর সাথে জড়িত থাকে, তার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এই অপহরণের সাথে জড়িত নয়। ছাত্রলীগ কখনোই নিয়োগের সাথে জড়িত না। আমাদের কোনো কর্মী যদি পরীক্ষা দেয়, তবে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আমরা ভিসি স্যারকে জানাই। পরীক্ষার্থী যদি যোগ্য হয় তবে তাকে চাকরি দেওয়া হয়।
যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার যবিপ্রবিতে লিফট অপারেটর পদে চাকরির পরীক্ষা ছিলো। সকাল ১০টার দিকে আমি জানতে পারলাম কিছু পরীক্ষার্থীকে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৩০৪ নম্বর রুমে ছাত্রলীগ কর্মীরা আটকে রাখছে। আমি হলের প্রভোস্টকে বিষয়টি দেখার জন্য পাঠাই এবং তিনি জানান রুমে কাউকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু দুপুর ১২টার দিকে যখন আমি অফিসে আসি, তখন তাদের অভিভাবকরা আমার সাথে দেখা করে তাদের স্বজনদের অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
তিনি বলেন, ‘বিকেল ৩টার দিকে অপহরণকারী পরীক্ষার্থীদের ছেড়ে দেয়া হয়। তারা আমাকে জানায় তাদেরকে হলের তিন তলার ৩০৪ নম্বর রুম, ৩০৯ নম্বর রুমে ও পাঁচতলার বিভিন্ন রুমে আটকে রাখা হয়। পরে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক। এর সুষ্ঠু তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানান উপাচার্য।
খুলনা গেজেট/কেডি