খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

ময়মনসিংহে বিএনপির গণসমাবেশ: পরিবহন বন্ধ

গেজেট ডেস্ক 

চট্টগ্রামে বিপুল জনসমাগম করে আলোচনায় আসার তিন দিন পর শনিবার ময়মনসিংহে আহূত হয়েছে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। মহড়া, পাল্টা মহড়া হলেও আজ শুক্রবার রাত পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ছিল ময়মনসিংহ। সংঘাত না হলেও বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ হওয়ায় সড়কপথে ময়মনসিংহ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সারাদেশ থেকে। সার্কিট হাউস ময়দান না পেলেও নগরীতে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি।

বিএনপি নেতারা বলছেন, তাঁদের কর্মসূচিতে জনসমাগম ঠেকাতেই সরকারের নির্দেশে পরিবহন বন্ধ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি- এতে তাঁদের হাত নেই। পুলিশ বলছে, পরিবহন বন্ধের খবর জানা নেই।

জেলা মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, নিরাপত্তার শঙ্কায় গণপরিবহন বন্ধ করা হয়েছে। শনিবার ময়মনসিংহে বাস, ট্রাক অটোরিকশা- কিছুই চলবে না।

সার্কিট হাউস ময়দান না পেলেও ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশন মাঠে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। আওয়ামী লীগও মাঠে থাকায় আজকের দিনটি শান্তিপূর্ণ থাকবে কিনা- তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে পুলিশি বাধার অভিযোগ নেই।

সমাবেশের আগের দিনই বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ময়মনসিংহে এসেছে। রাতে মঞ্চ তৈরির সময় কয়েক হাজার নেতাকর্মী ছিল পলিটেকনিক মাঠে। জেলার গফরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের মিছিল, মহড়ার বিপরীতে বিএনপির তৎপরতা ছিল না। স্থানীয় এমপি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের অনুসারীরা গ্রামে গ্রামে ‘পাহারা’ বসিয়েছে বিএনপি কর্মীদের সমাবেশে যাওয়া ঠেকাতে। গফরগাঁওয়ের বিএনপি কর্মীরা ভালুকা, শ্রীপুর গিয়ে জমায়েত হয়ে সেখান থেকে ময়মনসিংহে আসছে।

শহরে বাধা না দিলেও আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ সমাবেশ করে আজ ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দেয়। দুপুরে নতুনবাজারে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মোটরসাইকেল মিছিল করে দলটির কর্মীরা। রাতে সমাবেশস্থলের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও মহড়া দেওয়া হয়।

সমাবেশস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে শহরের কৃষ্ণচূড়া চত্বরে আজ দিনভর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নেতারা বলছেন, পায়ে পা দিয়ে সমাবেশ পণ্ড করতে চাইছে। তাদের দাবি- কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হবে সমাবেশে।

খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন সরকার, জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মী হত্যা, হামলা এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সর্বশেষ ২০১৮ সালে ময়মনসিংহে বিভাগীয় সমাবেশ করেছিল বিএনপি। তবে সেবার রাতের বেলায় রেলওয়ের কৃষ্ণচূড়া চত্বরের মতো ছোট স্থানে সমাবেশ হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, দলীয় কার্যালয়ে সামনে সমাবেশ করতে বলেছিল প্রশাসন। অবশেষে যেখানে অনুমতি, সেই পলিটেকনিক মাঠ কর্দমাক্ত। মাঠ সংস্কার ও গণপরিবহন সচল রাখতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেও লাভ হয়নি।

তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন স্থানে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমরান সালেহ বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ শহরজুড়ে মহড়া দিয়ে উস্কানি দিচ্ছে। প্রশাসন লাঠি ও বাঁশ আনতে নিষেধ করেছে। কিন্তু বিএনপি কর্মীদের নিরাপত্তা কে দেবে?’ আজ রাতে দেখা গেছে, সমাবেশস্থলে লাঠি নিয়েই জমায়েত হয়েছে বিএনপি কর্মীরা।

রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম বলেন, তাঁরা বিএনপির সমাবেশকে স্বাগত জানান। কিন্তু নৈরাজ্য হলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।

দলটির জেলার সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, শনিবার মিছিল, সভা করবে না আওয়ামী লীগ। তবে মোড়ে মোড়ে থাকবে নেতাকর্মীরা। নৈরাজ্য হলে প্রতিবাদ করবে।

মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক শাহিনুর রহমান জানিয়েছেন, বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিতে দলীয় নির্দেশ নেই। নেতাকর্মীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিএনপি হামলা করলে প্রতিহত করা হবে।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আখতারুজ্জামান বাচ্চু বলেছেন, গফরগাঁও থেকে বিএনপি কর্মীদের আসতে দেওয়া হচ্ছে না।

দুপুরে প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, যানবাহন বন্ধ করে দিলেও হেঁটেই জনস্রোত আসবে।

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মো. মাছুম আহাম্মদ ভুঁঞা বলেন, কাউকে লাঠি-বাঁশ নিয়ে আসতে দেওয়া হবে না। নিরাপত্তায় শহরজুড়ে পুলিশ থাকবে।

নেত্রকোনা জেলা থেকে ময়মনসিংহ অভিমুখী বাস চলছে না। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, তাঁদের নেতাকর্মীর বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়েছে।

বাস শ্রমিক সাইদুল ইসলাম ও কামাল হোসেন বলেন, বিএনপির সভা; তাই বাস বন্ধ। সভা শেষ হলে বাস চলবে। তবে এ বিষয়ে জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক আরিফ খানের মন্তব্য জানতে পারেনি সমকাল।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আনোয়ারুল হকে বলেন, বিএনপি কর্মীদের আটকাতেই বাস বন্ধ করা হয়েছে।

তবে পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদের দাবি, যানবাহন চলাচলে বাধা নেই। বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্টে নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।

শেরপুর জেলা বিএনপি সভাপতি মাহমুদুল হক রুবেল জানিয়েছেন, শুক্রবার বাস ও ট্রাক মালিকরা ভাড়ার টাকা ফেরত দিয়েছেন।

মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্টু ঘোষ বলেন, ‘আপনারা জানেন- কেন বন্ধ।’ তাঁর দাবি, নিরাপত্তায় শঙ্কায় মালিকরা বাস চালাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

ভালুকা-ত্রিশাল-ময়মনসিংহ রুটে চলা শালবন পরিবহনের ৭০টি বাস বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে সমিতি। ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন বলেছেন, বাস-ট্রাক কিছুই ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। প্রয়োজনে হেঁটে ময়মনসিংহ যাবে কর্মীরা।

ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগ ও মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানান, বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা নেই। সমিতি গাড়ি বন্ধ করেনি। কোনো মালিক গাড়ি ভাড়া দিলে তা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!