খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আগুন নিয়ন্ত্রণে, খুলনায় পাট গোডাউনসহ ১০ দোকানের কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই

ময়মনসিংহের পর মা‌ছের জিন ব্যাংক হ‌চ্ছে খুলনা ও সৈয়দপু‌রে

গেজেট ডেস্ক

দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে দেশের প্রথম লাইভ জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। ময়মনসিংহে অবস্থিত এই জিন ব্যাংকে ইতোমধ্যে ৮৫ প্রজাতির মাছের জিন সংরক্ষণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশীয় সব মাছকে এ ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হবে এবং নীলফামারীর সৈয়দপুর ও খুলনায় আরও একটি করে জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর এই লাইভ জিন ব্যাংক উদ্বোধন করেন। প্রতিষ্ঠিত এ জিন ব্যাংকে দেশের বিলুপ্তপ্রায় ভাগনা, দেশি কই, নাপিত কই, গুলশা, খলিশা, লালখলিশা, মাগুর, বোয়ালি পাবদা, সরঁপুটি, পুটি, শিং, মহাশোল, রুই, বুজুরি টেংরা, ভিটা টেংরা, গুলশা, বাটা, রিটা, মলা, পুইয়াগুতুম, পাহাড়ি গুতুম, ঠোটপুইয়া, শালবাইম, টাকি, ফলি, ঢেলা, চেলা, লম্বা চান্দা, রাঙাচান্দা, লালচান্দা, পিয়ালি, বৈরালি, দারকিনা, ইংলা, কেপ চেলা, রাণি, কাকিলা, কাজলী, ভাচা, বাতাসি, আঙ্গুস, কানপোনা, ঘাউরা, ভেদা, কাকিলা, বাসপাতাসহ মোট ৮৫ প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএফআরআইয়ের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মাছের জার্মপ্লাজম (জাত বা প্রকার) সংরক্ষণের জন্য লাইভ জিন ব্যাংক একটি আধুনিক ধারণা। জিন ব্যাংক মূলত কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের জেনেটিক উপাদানের সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা। কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ যখন হুমকির মুখে পড়ে তখন জিন ব্যাংকের প্রয়োজন হয়। প্রাকৃতিক উৎসে কোনো মাছ হারিয়ে গেলে সেসব মাছকে পুনরুদ্ধারের জন্য লাইভ জিন ব্যাংক থেকে ব্যবহার করা যাবে। সেক্ষেত্রে লাইভ জিন ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট মাছকে হ্যাচারিতে কৃত্রিম উপায়ে পোনা উৎপাদনের মাধ্যমে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনা হবে।
বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে দেশি প্রজাতির ছোট মাছ। দেশে মিঠা পানির মাছের মোট প্রজাতি ২৬০টি। এর মধ্যে ১৪৩ প্রজাতির ছোট মাছ রয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) ২০১৫ সালের তথ্যমতে, দেশে বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজাতি ৬৪টি। ভবিষ্যতে যেন দেশের মাছের সব প্রজাতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যায় সে উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছে এই জিন ব্যাংক।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (ডিজি) ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, ‘মাত্রাতিরিক্ত মাছ আহরণ, পরিবেশগত বির্পযয়, জলাশয় সংকোচনসহ নানান কারণে মৎস্য সম্পদ হুমকির মুখে পড়লে ফিস জিন ব্যাংক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। দেশকে মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাখতে এবং সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন মাছের উৎপাদন বাড়াতে জিন ব্যাংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’

তিনি বলেন, ‘বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছগুলো সংরক্ষণের জন্য আমরা লাইভ জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছি। গবেষক, চাষি ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে যেন সহজেই এ মাছগুলো পেতে পারেন, সে কারণেই এ প্রচেষ্টা।’

ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, ‘জিন ব্যাংক হচ্ছে একটি পুকুর। আরসিসি দেয়াল ঘেরা পুকুর এটি। একটি জিন ব্যাংক দিয়ে ভরসা করা যাবে না। হয়তো ময়মনসিংহে এমন একটা ডিজিজ হলো ব্যাংকের সব মাছ মরে গেল। আমরা তখন শূন্য হয়ে যাব। এজন্য আমরা সৈয়দপুরে মিঠাপানির প্রজাতির মাছের জন্য একটি জিন ব্যাংক করব, খুলনার পাইকগাছায় নোনাপানির মাছের জন্য আরেকটি করার পরিকল্পনা করেছি। সৈয়দপুরেরটা হবে ময়মনসিংহের রেপ্লিকা। যেন কোনো দুর্যোগে ময়মনসিংহের জিন ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হলে সৈয়দপুরেরটা দিয়ে কাজ চালাতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘দেশি রাক্ষুসে প্রকৃতির মাছের জন্য আমরা ময়মনসিংহেই আরেকটি জিন ব্যাংক করছি। ইতোমধ্যে এটার কাজ শুরু হয়েছে।’

মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘মাছের আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পর জিন ব্যাংকে সেই মাছ রিপ্লেস করা হয়। এভাবে ধারাবাহিকভাবে এটি চলতে থাকবে। কিছু কিছু মাছ আছে বেশি ডিম দেয়। এতে ওই মাছে পুকুর ভরে যাবে। এজন্য আমরা নিয়মিত জাল ফেলি, কোনো মাছ বেশি ডিম ছাড়লে আমরা অতিরিক্ত মাছ সরিয়ে দিই।’

জিন ব্যাংক কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়েছে জানিয়ে ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, ‘পুকুরের পাড়ে লাল পতাকা দেয়া আছে।’

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!