আলুর দাম গত বছরের এই সময়ে ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই ছিল। এবার উৎপাদন মৌসুম শেষ হতেই আলুর বাজার চড়েছে। এক বছর আগে দেশে উৎপাদিত রসুনও বেশ কম দামেই কিনেছিলেন ভোক্তারা। এই দুটি কৃষিপণ্যই এবার গতবারের চেয়ে ৪০ শতাংশের ওপরে বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
এক বছরের ব্যবধানে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজও ২৪ শতাংশ বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। উৎপাদন মৌসুম শেষ হওয়ার পরপরই এসব কৃষিপণ্যের চড়া দাম দেখা যাচ্ছে বাজারে। এই তিন পণ্যই এপ্রিলের মাঝামাঝিতে কালবৈশাখী শুরু হওয়ার আগেই ঘরে তোলেন কৃষকেরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উৎপাদন মৌসুমেই এবার আলু ও পেঁয়াজের দাম বেশি ছিল। কারণ, গত বছরের শেষ দিকে এসে এই দুই কৃষিপণ্যের দাম অনেকটা লাগামহীন হয়ে পড়ে। সেই ধারাবাহিকতা দেখা যায় উৎপাদন মৌসুমেও। আশা করা হচ্ছিল, মৌসুম শেষ হলে আলু ও পেঁয়াজের দাম প্রতিবছরের মতো এবারও নেমে আসবে।
কিন্তু এবার বাজারে সেই চিত্র দেখা যাচ্ছে না। উল্টো বাড়তি দাম এই দুই কৃষিপণ্যের। আর সামনে আসছে কোরবানির ঈদ। এই সময়ে বাজারে রসুনের চাহিদা বেশি থাকে। আমদানি করা রসুনের দামও বেশি। তাতে করে এবার দেশি রসুনের দামও বেশি পড়ছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) শনিবারের বাজারদরের তালিকানুযায়ী, ঢাকার বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকায়। কিন্তু বাজারে আলুর দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। টিসিবির হিসাবে গত বছরের এই সময়ে বাজারে আলুর দাম ছিল ৩২ থেকে ৩৫ টাকা। সেই হিসাবে বাজারে প্রতি কেজি আলু প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির হিসাবে দাম বেড়েছে ৪৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আলুর চাষ ভালো ছিল, উৎপাদনও ভালো হয়েছে। হিমাগারে আলু সংরক্ষণও গত বছরের চেয়ে বেড়েছে। এবার কৃষক ভালো দাম পেয়েছেন, সেটা ইতিবাচক। পরেরবার আলুতে তাঁদের আগ্রহ থাকবে। কিন্তু কৃষক থেকে ব্যবসায়ী—যেকোনো পর্যায়ে কেউ অতিরিক্ত লাভ করে ক্রেতার ওপর চাপালে তখন বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়।
সরকার আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে আলু আমদানির অনুমতি দিয়ে রেখেছে। কিন্তু পাশের দেশে আলুর দাম বেশি থাকায় আমদানিকারকদের আগ্রহ কম। ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর একধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে সময়ে সময়ে সরকারি ভিত্তিতে কিছু পেঁয়াজ আসছে। তবে সেটা পরিমাণে কম। নতুন করে গতকাল বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশে এক লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানির কথা জানিয়েছে ভারত সরকার।
এদিকে টিসিবির হিসাব বলছে, দেশের বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। যদিও বাজারে পেঁয়াজের দাম ক্ষেত্রবিশেষ আরও ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তি দেখা যাচ্ছে। টিসিবির হিসাবে, গত বছরের এই সময়ে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২৪ শতাংশ বেড়েছে। দেশে উৎপাদিত রসুনের দামও গত বছরের চেয়ে এখন ৪২ শতাংশ বেশি। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকায়। গত বছর যা ছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।
পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, পেঁয়াজের দাম এখন বাজারে যা আছে, উৎপাদন খরচ বিবেচনা করলে সেটাকে বেশি বলা যাবে না। কৃষকের হাতে পেঁয়াজ যত দিন আছে, তত দিন দাম এমনই থাকবে। তাঁর মতে, দেশে রসুন উৎপাদিত হলেও চাহিদার তুলনায় কম। এ জন্য আমদানি করা রসুনের বাজারের ওপর দেশি রসুনের বাজার ওঠানামা করে। ডলারের দাম বেশি হওয়ায় আমদানি করা রসুনের দাম এখন বেশি।
খুলনা গেজেট/কেডি