বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলোতে দৈন্যদশা। নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই অনেক বিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রীদের ছুটি দিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন শিক্ষকেরা ছুটি না নিয়ে অনেকেই থাকছেন অনুপস্থিত। পরেরদিন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে দেখানো হচ্ছে নিয়মিত হাজিরা। সময়ের প্রতি তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামাফিক আসছেন বিদ্যালয়ে। কোথাও কোথাও প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনা মানছেনা সহকারী শিক্ষকেরা। নৈশপ্রহরী পদে অনেকেই মাসের পর মাস বিদ্যালয়ে না এসেও পার করছেন দিন।
সরেজমিনে এরকম একটি বিদ্যালয়ের ৩টি শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত শিক্ষার্থী রয়েছে ৮ জন। ৫টি পদে কর্মরত শিক্ষক ৫জন থাকলেও উপস্থিত রয়েছে ২জন। সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের নেই কোন নজরদারি। প্রথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন বরাদ্দ থাকলেও তা ব্যবহৃত হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। কাজে আসছেনা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্থ বরাদ্দ। দায়সারাভাবে ক্লাসে পাঠ দিয়ে কোনমতে দিন পার করছেন একাধিকরা।
উপজেলার জিউধরা ইউনিয়নের ২৩১ নং ঠাকুরনতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়টি ১৯৯০ সালে স্থাপিত।
মঙ্গলবার সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট। বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী হাজিরা খাতায় ১১৪ জন। উপস্থিতি রয়েছে ৩টি শ্রেণীকক্ষে মাত্র ৮ জন শিক্ষার্থী। এদের পাঠদান দিচ্ছেন সহকারী শিক্ষক ফাতিমা আক্তার ও শান্তনু তাফালী ২ শিক্ষক। ৩য় শ্রেণীতে উপস্থিত ১ জন মাত্র শিক্ষার্থী মারিয়া সুলতানা, চতুর্থ ৪ জন ও ৫ম শ্রেনীতে ৩ জন। একটি শ্রেণী কক্ষে ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলতে দেখা গেছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আকলিমা খানম রয়েছেন অফিসিয়াল কাজে উপজেলা সদরে। সহকারী শিক্ষিকা পপি সুলতানা ছুটি না নিয়েও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত।
আরেকজন সহকারী শিক্ষিকা খায়রুন্নাহার রয়েছেন ৩ দিনের ছুটিতে। বিদ্যালয়টিতে সরকারীভাবে ক্ষুদ্র মেরামত, স্লিপ, প্রাক- প্রাথমিক, করোনা সহায়তা সহ একাধিক বরাদ্দ, পুরাতন ভবনের সামনেই নির্মিত হচ্ছে নতুন স্কুল ভবন। এতসব বরাদ্দ পেয়েও হয়নি পরিবর্তন, মানোন্নয়নও হয়নি শিক্ষা ব্যবস্থার। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে কমছে।
এ সম্পর্কে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আকলিমা খানম মুঠোফোনে জানান, তিনি অফিসিয়াল কাজে উপজেলা সদরে যাবার কথা ছিলো। শারীরিক অসুস্থতার কারনে বাড়ীতে রয়েছে। একজন সহকারী শিক্ষক রয়েছে ৩দিনের ছুটিতে, সহকারী শিক্ষক পপি সুলতানার অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেননা।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার শেখ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিনি সদ্য মাত্র এ উপজেলায় যোগদান করেছেন। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের মাসিক সভার পর বিদ্যালয়ের বিদ্যমান অনিয়ম ও সমস্যাগুলোর পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম তারেক সুলতান বলেন, উপজেলার শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান হালহকিকত এভাবে চলতে পারেনা। তিনি নিজেও একটি বিদ্যালয় সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে ১৯ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিত পেয়েছেন। এ অবস্থার পরিবর্তন ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে শিক্ষা অফিসারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ বি এম এস