বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ছেলেকে ইতালীতে কাজ দেয়ার কথা বলে নকল ভিসা দিয়ে ১১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এ চক্রের প্রতারনার শিকার হয়ে এখন সব কিছু হারিয়ে পথে বসেছে ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ীর পরিবারটি। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী রুনু বেগম বাদি হয়ে আনোয়ারা বেগমসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, মোরেলগঞ্জ পৌর শহরের ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ক্ষুত্র ব্যবসায়ী বুলু শেখের ছেলে মারুফ হোসেনকে ইতালীতে গার্মেন্টেস শ্রমিকের ভিসা দেয়ার কথা বলে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারী প্রথমে সাড়ে ৯ লাখ টাকার চুক্তিতে ইউনিয়নের বাদুরতলা গ্রামের লেহাজ উদ্দিন শেখের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ও তার ছেলে ইতালী প্রবাসী বাদশা শেখ, তার ভাই ফারুক শেখ, আনোয়র শেখ স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে ১ লাখ টাকা নেয়।
পরবর্তীতে এ চক্রটি ভিসা নিতে হলে ১২ লাখ টাকা দিতে চাপ দেয় ওই ব্যবসায়ীকে। নিরুপায় হয়ে তাদের কথা মেনে নিয়ে অভিযোগের বাদি রুনু বেগম স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে, লোন করে ওই চক্রটির একাধিক ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় মোট ১১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে এ চক্রটি রুনু বেগমের ছেলে মারুফ হোসেনের নামে ইতালীর ভুয়া ভিসা প্রদান করলে মারুফ ভিসা প্রসেসিং ও ফ্লাইটের তারিখ জানতে গিয়ে এ্যাম্বাসী কর্র্তৃপক্ষ ভিসাটি নকল বলে জানিয়ে দেয়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বুলু শেখ তার স্ত্রী ছেলের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে আনোয়ারা বেগম ও তার ছেলেদের নিকট প্রদানকৃত সম্পূর্ন টাকা ফেরৎ চাইলে তারা বিভিন্ন কথা বলে টাল বাহানা শুরু করে এবং টাকা ফেরৎ দেয়ার জন্য আজ কাল বলে ঘুরাতে থাকে। এক পর্যায়ে আনোয়ারা বেগমের মোবাইল ফোনটি বন্ধ রেখে আত্মগোপনে চলে যায়।
এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারটি ঋণগ্রস্থ হয়ে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ৬ মাস ধরে বিচারের জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও প্রতারক চক্রের বিচার ও তাদের টাকা ফেরৎ পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
অভিযোগের বাদি ভুক্তভোগী রুনু বেগম বলেন, ছেলে-লেখা পড়া করে বেকার ঘুরছে, কোথাও চাকুরী হচ্ছে না। ভেবেছিলাম বিদেশে পাঠিয়ে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরবে। সে স্বপ্ন চুরমার করে এখন আমাদের পথে বসিয়েছে দূস্পর্কের বোন আনোয়ারা বেগম ও তার ছেলেরা। আমি কোথায় গেলে এর সঠিক বিচার পাবো, সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। টাকা ফেরৎ পেতে উর্ধ্বতণ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
প্রতারনার শিকার বুলু শেখ বলেন, টাকার জন্য আনোয়ার বাড়িতে একাধিকবার ধরনা দিয়েছি। তার ছেলে ফারুকের কাছে গেলে সে আওয়ামী লীগের নেতা বলে ক্ষমতার দাপটে আমাদের উল্টো হুকমি ধামকি দিয়ে তারিয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে ফারুক শেখ বলেন, তার ভাই বাদশা শেখ ইতালী প্রবাসী সঠিক। তবে তিনি কাউকে হুমকি দেয়নি ও ভিসা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। রুনু বেগম তার মায়ের নিকট ১ লাখ টাকা দিয়েছেন এতটুকুই জানেন তিনি।
এ সম্পর্কে মোরেলগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মো. রাকিবুল হাসান বলেন, বিদেশে নেয়ার কথা বলে টাকা লেন দেনের বিষয়ে রুনু বেগম একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, যদিও এটি আদালতের বিচার সংক্রান্ত।