খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল ইতিহাসে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার ঋষভ পন্ত
আট শতাধিক মৎস্য ঘের পানির নিচে

মোরেলগঞ্জে জলাবদ্ধতায় ২ হাজার বিঘা জমি’র আমন বীজতলা বিনষ্ট

এম.পলাশ শরীফ, মোরেলগঞ্জ

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে গত এক সপ্তাহ ধরে জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে প্লাবিত হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পানি আটকে পড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে নিম্নাঞ্চল গ্রামগুলোর ২ হাজার বিঘা আমন বীজতলা বিনষ্ট হয়ে পড়েছে। হতাশায় ভুগছেন কৃষক। ৮ শতাধিক মৎস্য ঘের পানির নিচে নিমজ্জিত।

দিনে-রাতে দু’বার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে মোরেলগঞ্জ পৌর বাজারসহ ২৫টি গ্রাম। বেড়িবাধ ভেঙ্গে ৮ শতাধিক মাছের ঘেরে প্রবেশ করছে অতিরিক্ত পানি। পানির তোরে ভেঙ্গে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি ও কাঁচা-পাকা রাস্তা। ৭০ হেক্টর স্থানীয় আমন বীজতলায় ফসলের ক্ষতিস্বাধন হবার সম্ভাবণা রয়েছে। ফলে স্থবির হয়ে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, সরকারি-বেসরকারি দাপ্তরিক ও শিক্ষা কার্যক্রম।

সরেজমিনে মঙ্গলবার দেখা গেছে, পঞ্চকরণ ইউনিয়নের খারইখালী পঞ্চকরণ, উত্তর কুমারিয়াজোলা, মহিষচরনী, ২ হাজার বিঘা ফসলী জমি আমন বীজতলা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে এখনও পানির নিচে রেকর্ডীয় খালে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ।

ক্ষতিগ্রস্ত খারইখালী গ্রামের জালাল শরীফ ২০ বিঘা জমিতে ৬ মন ১৪ কেজি আমন বীজ সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে গেছে। একই গ্রামের লতিফ শেখের ৫ বিঘা, আবজাল শেখ ১৪ বিঘা, তুষার আকন ১২ বিঘা, শ্যামল ডাকুয়া ৭ বিঘা, সুব্রত বিশ্বাসের ১০ বিঘা, বেল্লাল শেখের ৬ বিঘা আমন বীজ জলাবদ্ধতায় বিনষ্ট হয়েছে। হতাশাগ্রস্ত একাধিক কৃষকরা জানান, খারইখালী দরগাবাড়ি হয়ে কুমারিয়াজোলা সংযোগ ৪ কিলোমিটার ভারানী সরকারি রেকর্ডীয় খালে ৬/৭টি বাঁধ দিয়ে ১০/১২ বছর ধরে পানি চলাচল বন্ধ করে রেখেছে প্রভাবশালীরা যে কারনে কৃষকদের এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মজুমদার জানান, জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৫ টি গ্রাম হুমকির মুখে রয়েছে দেবরাজ ভেড়িবাঁধ অধিকাংশ মৎস্য ঘেরও তলিয়ে গেছে। সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির মোল্লা জানান, গাবতলা গ্রামটি নদীর তীরবর্তী হওয়ায় পানির প্রবাহটা সেখানে বেশি। ওই গ্রামের শতাধিক পরিবার নিয়মিত পানির সাথে যুদ্ধ করে বসবাস করে আসছে। ওই গ্রামের কোন বাড়িতে রান্না করার কোন ব্যবস্থা নেই। খাউলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাষ্টার সাইদুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নে ৭/৮ টি কাঁচা পাকা রাস্তা পানির তোড়ে ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

বহরবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিএম রিপন জানান, পশ্চিম বহরবুনিয়া, উত্তর ফুলহাতা, ঘষিয়াখালী গ্রামের ৪ শতাধিক মৎস্য ঘের অতিরিক্ত পানিতে ডুবে গিয়ে মাছ ভেসে গেছে।

জিউধরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বাদশা জানান, পালেরখন্ড, কাকড়াতলী, শনিরজোড়, সোনাতলা, চন্দনতলা গ্রামে ৩ শতাধিক ঘের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বেশ কিছু কাচা ঘর ভেঙ্গে গেছে। হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরামুজ্জামান বলেন, তার ইউনিয়নের বদনীভাঙ্গা, পাঠামারার শতাধিক মাছের ঘের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানির চাপে এসব ঘেরের বেড়ি ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করে বেড়িয়ে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে শতাধিক ঘের ব্যবসায়ী। বদনীভাঙ্গার বিএস রতমতিয়া দাখিল মাদ্রাসা হয়ে সেকেন্দার আলীর দোকান পর্যন্ত ১ কিলোমিটার ইটের স্লো‌লিং রাস্তা ও মুসলিম ইট ভাটা হয়ে পাঠামারা হাজ্বিগঞ্জের ২ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটিও ভেঙ্গে পড়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার আকাশ বৈরাগী জানান, গত এক সপ্তাহে অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কৃষকের চলতি আমন ফসলে বীজতলায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ২১শ’ হেক্টর জমিতে আমন বীজতলা করেছেন কৃষক। এর মধ্যে জলাবদ্ধতার কারনে ৭০ হেক্টর বীজতলার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খোজ খবর নিয়ে পরবর্তী করনীয় বিষয় কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হবে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার বিনয় কুমার রায় বলেন, এ পর্যন্ত বিভিন্ন ইউনিয়নের ৮ শতাধিক মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গিয়ে ভেসে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সংশ্লিষ্ট এলাকায় খোঁজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ঘেরগুলোর তালিকা নিরুপন করে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ঘাট, কৃষি ও মৎস্য ঘেরগুলোর খোঁজ খবর নিয়ে একটা তালিকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন বলেন, খাউলিয়া ইউনিয়নের কুমারখালী হয়ে বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ঘষিয়াখালী পর্যন্ত নদী রক্ষণা‌বেক্ষণ ওয়াল করার প্রস্তাবটি একনেকে পাস হয়েছে। খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে। নদী প্রটেকশন ওয়াল হলে এভাবে আর সাধারণ মানুষকে পানিতে ডুবতে হবেনা।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!