মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বিকাশ, নগদ, রকেটসহ অন্যান্য সার্ভিসের উচ্চ চার্জ এবং একটির সাথে অন্যটির চার্জের পার্থক্য গ্রাহকদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। গ্রাহকরা বলছেন, এটা এক ধরনের অমানবিক আচরণ। দ্রুত সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস চার্জ কমানোর দাবি তাদের।
দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে অতি দ্রুত টাকা পাঠানো বা আনা যায় বলে এটি সর্বসাধারণের কাছে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু লেনদেনে যে পরিমাণ সার্ভিস চার্জ দিতে হয় তা সবার জন্য অতিরিক্ত। দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালকসহ দেশের প্রায় সব শ্রেণি পেশার লোক মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করে থাকে। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর এই সেবায় এত বেশি চার্জ অযৌক্তিক।
খুলনা নগরীর ময়লাপোতায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট সামিয়া এন্টারপ্রাইজের আব্দুর রশিদ খুলনা গেজেটকে বলেন, বিকাশে সবচেয়ে বেশি সার্ভিস চার্জ দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের, তারপরও ৭০ শতাংশ মানুষ বিকাশে লেনদেন করছে। কারণ বিকাশ বাদে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো সব জায়গায় নাই। ফলে মানুষ নিরুপায় হয়েই বিকাশে লেনদেন করে।
বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত মোঃ সৌমিক ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান লোকসানের মধ্যে দিয়ে গেলেও চাঙ্গা বিকাশ, রকেট, নগদসহ অন্যান্য সেবার লেনদেন। তিনি বলেন নগদ যদি সার্ভিস চার্জ হাজারে সাড়ে ১৪ টাকা নিতে পারে তাহলে বিকাশ কেন পারবেনা! এরকম বৈষম্যের কারণে আমরা গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্হ হচ্ছি। তিনি সকল মোবাইল ব্যাংকিং সেবার চার্জ সিঙ্গেল ডিজিটে আনার দাবি জানান।
অটোচালক বাবুল হোসেন বলেন, মাসে দুই থেকে তিনবার বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয়। বাড়ির পাশে বিকাশের দোকান আছে তাই বিকাশেই টাকা পাঠাই। কিন্তু প্রতি হাজারে এত বেশি টাকা কাটলে আমাদের কষ্ট হয়। তিনি বলেন শুনেছি ‘নগদ’ এ টাকা পাঠালে খরচ কম, কিন্তু নগদ তো সব যায়গায় নেই। বাধ্য হয়েই বিকাশে টাকা পাঠাতে হয়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিকাশ বর্তমানে ক্যাশ আউট করতে প্রতি হাজারে সাড়ে ১৮ টাকা কাটে। আর ক্যাশ ইনে কোনো টাকা কাটে না। সেন্ট মানি পাঠাতে গেলে যে কোনো পরিমাণের জন্য কাটে ৫ টাকা। রকেটে ক্যাশ আউটে ৯ টাকা এবং ক্যাশ ইনেও ৯ টাকা কাটে। সেন্ট মানির জন্য কাটে ৫ টাকা। তবে নগদে কিছুটা কম আছে। ক্যাশ আউটে নগদে প্রতি হাজারে কাটে সাড়ে ১৪ টাকা। তবে নগদ এ্যাপসে প্রতি হাজারে কাটে ভ্যাটসহ সাড়ে ১১ টাকা। ক্যাশ ইনে কোন খরচ নেই। সেন্ট মানিতে কাটে ৪ টাকা।
উল্লেখ্য বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের মার্চে। বর্তমানে দেশে ১৬টি ব্যাংক মোবাইলে আর্থিক সেবা দিচ্ছে। এর ৭০ শতাংশ বিকাশের নিয়ন্ত্রণে, ২২ শতাংশ রকেটের আর বাকিটা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর।
খুলনা গেজেট/কেএম