খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রেপ্তার

মোদির সামনে ভারতের সংকটের কথা তুললেন বাইডেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে উচ্চ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বাইডেন বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মোদির ভাষ্য, দুই দেশ বিশ্ব শান্তির জন্য একত্রে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে দুই নেতা বৈঠকে মিলিত হওয়ার আগে এসব কথা বলেন।

মোদিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে দেশটির চলমান সংকটের কথা তুলে ধরতেও ভোলেননি বাইডেন। ধর্মীয় স্বাধীনতাকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘মূলনীতি’ বলে অভিহিত করেছেন বাইডেন।

তিনি বলেন, ‘আইনের সমান সুযোগ লাভ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় বহুত্ববাদ এবং আমাদের জনগণের বৈচিত্র্য– এই মূলনীতিগুলো বিকশিত হয়েছে।’ বাইডেন বলেন, ‘দুটি মহান জাতি, দুটি মহান শক্তি, দুটি মহান বন্ধু একুশ শতকের গতিপথকে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।’

মোদি বলেছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করা এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এগুলো আমেরিকা এবং ভারতের পাশাপাশি সমগ্র বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

গান স্যালুট এবং উভয় দেশের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে হোয়াইট হাউসে মোদিকে স্বাগত জানানো হয়। উৎফুল্ল মোদি বলেন, এ সম্মান ১৪০ কোটি ভারতীয়র জন্য একটি সম্মান।

মোদিকে স্বাগত জানিয়ে বাইডেন বলেন, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময় থেকে দু’জন একসঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে বিশ্বাসের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। বিশ্বের পরিস্থিতি বিবেচনা করে এটা অপরিহার্য যে, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করে।

তিন দিনের এ সফরে মোদিকে বিরল সম্মান দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। তবে ভারতের ক্রমাবনতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন দুই দেশের উদারপন্থিরা। সফরের শেষ দিন বৃহস্পতিবার মোদি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক, হোয়াইট হাউসে রাষ্ট্রীয় ভোজে অংশগ্রহণ এবং কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেন।
মোদির রাষ্ট্রীয় সফরে কয়েকটি বড় চুক্তি হয়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান টেসলা ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ ভারতে কারখানা স্থাপন করবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সিইও ইলন মাস্ক। ভারতের দক্ষ কর্মীদের জন্য ভিসা নীতি সহজ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

জেনারেল ইলেকট্রিকের মহাকাশ শাখা ঘোষণা করেছে, তারা ভারতীয় বিমানবাহিনীর জন্য জঙ্গি বিমানের ইঞ্জিন তৈরি করতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে। এটি ভারতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা চুক্তি। ভারতে নতুন কনস্যুলেট খুলবে যুক্তরাষ্ট্র।

ভারতও আর্টেমিস অ্যাকর্ডে যোগ দেবে। এর ফলে ২০২৫ সালের মধ্যে আবার চাঁদে মানুষ পাঠানোর মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টা, মঙ্গল গ্রহ এবং তার বাইরে মহাকাশ অনুসন্ধান সম্প্রসারণের চূড়ান্ত লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী হচ্ছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান মাইক্রোন গুজরাটে ৮২ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে সেমিকন্ডাক্টর কারখানা চালুর ঘোষণা করেছে।

ভারতীয় নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজের পরিবেশ সহজ করবে বাইডেন প্রশাসন। মোদির সফর ঘিরে ভারতীয় কিছু দক্ষ কর্মীর সেখানে প্রবেশ বা বসবাসের পথ খুলবে বলে সফর সংশ্লিষ্টদের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। গতকালই যুক্তরাষ্ট্রের ‘এইচ-ওয়ান বি’ ভিসাধারী অল্পসংখ্যক ভারতীয় ও অন্য বিদেশি কর্মীদের ওই ভিসা নবায়নের সুযোগ ঘোষণা করার কথা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের। পাইলট প্রোগ্রামের আওতায় সামনের বছরগুলোতেও এই সুযোগ বাড়ানো হতে পারে।

মোট ৪০০ অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয় মোদির সম্মানে আয়োজিত এই নৈশভোজের আসরে। ফার্স্টলেডি জিল বাইডেন বলেছেন, ‘আমরা ভারতের জাতীয় পাখি ময়ূরের কথা মাথায় রেখে এই নৈশ আহারের ব্যবস্থা করেছি। ময়ূর পেখম মেলে সামনে দাঁড়ালে আমাদের যেমন রাজকীয় অনুভূতি হয়, এই নৈশভোজের আসরেও তেমনই অনুভূতি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে হোয়াইট হাউস।’

মোদি নিরামিষাশী। তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নানা রকম নিরামিষ পদে আপ্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় সে দেশের রন্ধনশিল্পী নিনা কার্টিসকে। নিনা নিরামিষ পদ বানাতে সিদ্ধহস্ত। গাছগাছালি, ফল, সবজি থেকে তৈরি সুস্বাদু খাবার বানাতে তাঁর জুড়ি নেই।

তবে শুধু খাওয়া-দাওয়া আর সাজসজ্জাই নয়, নৈশভোজের আসরে ছিল মোদির মনোরঞ্জনের ব্যবস্থাও। মোদিকে গান শোনাতে হাজির ছিলেন গ্র্যামি পুরস্কারজয়ী জোসুয়া বেল এবং পেন মাসালা।

এর আগে মোদি হোয়াইট হাউসে বাইডেন দম্পতির সঙ্গে এক ভোজসভায় অংশ নেন। এ সময় দুই নেতা একে অপরের হাতে কিছু উপহার সামগ্রী তুলে দেন। মোদির দেওয়া উপহারের তালিকায় ছিল– কলকাতার স্বর্ণকারদের তৈরি রুপার গণেশ এবং প্রদীপ। এ ছাড়া জয়পুরের শিল্পীদের তৈরি কারুকাজ করা চন্দনকাঠের বাক্সে ছিল যজুর্বেদের বৈখনস গৃহসূত্রম। বাইডেনের স্ত্রী জিলকে একটি সবুজ হীরা উপহার দিয়েছেন মোদি।

মোদিকে ২০ শতকের হাতে লেখা একটি অ্যান্টিক বই উপহার দিয়েছেন বাইডেন ও তাঁর স্ত্রী। এর বাইরে বাইডেন বন্যপ্রাণীর ছবি সংবলিত একটি হার্ডকাভার বই উপহার দেন। জিল বাইডেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে রবার্ট ফ্রস্টের সংগৃহীত কবিতার একটি বই উপহার দেন। বাইডেন মোদিকে একটি ভিনটেজ আমেরিকান ক্যামেরাও উপহার দেন। এটি ক্যামেরা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কোডাক প্রথমবারের চালানে তৈরি করেছিল। ক্যামেরাটির সঙ্গে বাইডেন মোদিকে জর্জ ইস্টম্যানের প্রথম কোডাক ক্যামেরার পেটেন্টের একটি অনুলিপিও দেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জিলকে উপহার দেওয়া সাড়ে ৭ ক্যারেটের ওই হীরাটি খনি থেকে মেলেনি। পরীক্ষাগারে সৌরশক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম পদ্ধতিতে বানানো হয়েছে। প্রাকৃতিক হীরার সব বৈশিষ্ট্যযুক্ত এই কৃত্রিম হীরা পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তাবাহী। হীরাটি রাখা ছিল কাশ্মীরের শিল্পীদের তৈরি প্রখ্যাত ‘কর-ই-কলমদানি’ বাক্সে। নকশা আঁকা বাক্সটি তৈরি দামি ‘প্যাপিয়ার ম্যাচ’ কাগজ দিয়ে।

সূত্র : এএফপি, রয়টার্স, এনডিটিভি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!