ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র সম্ভাব্য বিপদ সামনে রেখে প্রস্তুতি নিয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে এই সমুদ্র বন্দরে জারি করা হয়েছে এলার্ট ‘২’। একই সাথে ঝুঁকি এড়াতে দুটি বিদেশি জাহাজকে বন্দরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। জাহাজ দুটি হচ্ছে-ভিয়েতনাম পতাকাবাহী ওশানস লাইন ও মার্শাল আইল্যান্ড পতাকাবাহী ইকো গ্যালাক্সী। এই দুই জাহাজে গ্যাস আমদানি করা হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শাহিন মজিদ এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গ্যাস নিয়ে ওশান লাইনস জাহাজটি বন্দর এলাকায় যমুনা এলপিজির জেটিতে এবং ইকো গ্যালাক্সী জাহাজের গ্যাস পেট্রোম্যাক্স এলপিজিতে শনিবার (১৩ মে ) আসার কথা ছিল। কিন্তু দূর্যোগের কারণে মোংলা বন্দরের বাইরে হিরণ পয়েন্টে অবস্থান করছে জাহাজ দুটি। অবস্থা আরও বেশি খারাপ হলে ওই দুটি জাহাজকে চট্রগ্রাম বন্দরে চলে যাওয়ার জন্য বলা হবে। এছাড়া পণ্য খালাস শেষে আজ (শনিবার) দুপুর ৩টায় মার্কেলটাইল-৪৪, জাহান ব্রাদার্স, ইন্দিগো ওমেগা এবং ক্যায়সা ওয়ান নামে চারটি বিদেশি জাহাজ মোংলা বন্দর ত্যাগ করবে বলেও জানান তিনি।
ক্যাপ্টেন শাহিন মজিদ আরও বলেন, এই মূহুর্তে বন্দরে ১১টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। কিন্তু শনিবার (১৩ মে) সকাল থেকে সেসব জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জাহাজের পাশে অবস্থান করা পণ্য নিতে আসা ছোট লাইটার, বার্জ ও কোস্টারগুলোকেও নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে।
মোংলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ হারুনুর রশিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণে অবস্থান করছে। এটা এখন চট্রগ্রাম ও মিয়ানমারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মোংলায় চার নম্বর হুশিয়ারি সংকেত বহাল রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাবে সুন্দরবনে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দেড় ফুট পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন করমজল বন্যপ্রাণী ও প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির। এছাড়া করমজলে বন্যপ্রানীদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তত রয়েছে কোস্টগার্ড। পশ্চিম জোনের (মোংলা সদর দপ্তর) অপারেশন কর্মকর্তা লেফট্যানান্ট কমান্ডার তারেক আহমেদ বলেন, ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় থেকে উপকূলবাসীদের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সতর্কাবার্তার প্রচার চলছে। এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ, সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন ঝুকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে সাইক্লোন শেল্টারে নেওয়ার পাশাপাশি কোস্ট গার্ড স্টেশনে আশ্রয় প্রদান করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোস্ট গার্ডের সকল জাহাজ, বোট, স্টেশন, আউটপোষ্ট এবং ডিজাস্টার রিসপন্স এন্ড রেস্কিও টিম প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) দীপংকর দাশ বলেন, এখানে ১০৩টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি ইউনিয়নে ৮৪ টি এবং পৌরসভায় ১৯ টি। এছাড়া সিপিপির ৬৬টি ইউনিটের প্রায় ১ হাজার ৪০০ স্বেচ্ছাসেবকসহ দূর্গত জন্য পর্যাপ্ত খাবারও মজুদ করে রাখা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম