মোংলা বন্দরে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে চার কন্টেইনার আমদানী নিষিদ্ধ পোস্তাদানা আটকের ঘটনায় শিপিং এজেন্টসহ দুই আমদানীকারকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা পরও জড়িত কেউ এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। ফলে এক সপ্তাহেও রহস্যের জট খোলেনি।
তবে বন্দর ব্যবহারকারীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, এর আগেও এই চক্রের মাধ্যমে একই ধরণের চালান মোংলা বন্দরের মাধ্যমে খালাস হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ খতিয়ে দেখলে অবাক করার মতো তথ্য বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত ১৬ আগস্ট মোংলা কাস্টমস হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ ইমদাদুল হক বাদী হয়ে চার কন্টেইনার বোঝাই পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার ১০/বি সোয়ারী ঘাট রোড, কোতয়ালীর মেসার্স তাজ ট্রেডার্স ( যার বিন ০০২১৮৯২৩৩-০২-০৬) ও ০৬/১০ ডি চম্পাতলি লেন চকবাজারের মেসার্স আয়শা ট্রেডার্স (যার বিন ০০১৭৩১৮৬৪-০২-০৬) এবং শিপিং এজেন্ট ৬ শামছুর রহমান রোড, খুলনার মেসার্স ওশ্যান ট্রেডার্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-(বি)-১ (বি) ধারায় মোংলা থানায় মামলা দায়ের করেন, যার নং-১৪।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কন্টেইনারবাহী বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজটি মালয়েশিয়া থেকে ছেড়ে এসে সিঙ্গাপুরে যাত্রা বিরতির পর গত ৯ আগষ্ট মোংলা বন্দরের জেটিতে কন্টেইনার খালাস শেষ করে চলে যায়। তবে এ জাহাজটি বন্দের নোঙ্গরের আগেই কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, আমদানী নিষিদ্ধ পণ্য এনে রাতের আধারে বন্দরের অসাধু লোকদের যোগসাজসে কন্টেইনার সীল ভেঙ্গে মালামাল লুকিয়ে রাখা হবে। অতঃপর অন্যান্য আমদানিকৃত পণ্যের সাথে ( শুল্ক কর পরিশোধিত) মিশিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের অগোচরে নিরাপত্তা ও ডেলিভারি পর্যায়ের কর্মচারিদের সাথে শিপিং এজেন্টের কর্মচারি আতাত করে উক্ত চোরাচালানকৃত মালামাল অপসারণ করা হবে।
সূত্র জানায়, বন্দরে জেটিতে খালাসের পর পরই ওই আমদানীকারকদের আনা ৪টি কন্টেইনার শনাক্ত ও নজরদারীতে রাখে কাস্টমস। ১২ আগস্ট আমদানীকারকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে চিঠির মাধ্যমে কন্টেইনার ৪টি উম্মুক্তভাবে খুলে কাইক পরীক্ষার করার জন্য তাদের জানানো হয়। চিঠির জবাব না পেয়ে পুনরায় চিঠির মাধ্যমে কাস্টমস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওই কন্টেইনারে থাকা পণ্য খালাসের জন্য জানায় আমদানীকারকদের। কিন্তু চিঠি পাওয়ার পরেও আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান এতে কোন কর্ণপাত না করায় তাদের সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। ১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাষ্টমস, সিএন্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট, চেম্বার অফ কামার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলের উপস্থিতিতে বন্দর জেটিতে এ কন্টেইনার খুলে আমদানী নিষিদ্ধ ২ হাজার ৬শ’ ৬৯ টি বস্তায় ৬৮ হাজার ২ শ’ ৬৫ কেজি পোস্তদানা পাওয়া যায়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১১ কোটি টাকা বলে মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, টেনিস বল ও স্নো স্প্রে আমদানির জন্য এলসি করা হয়েছিল পূবালী ব্যাংক, ২৬ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা শাখা থেকে। তাদের কাগজপত্রে টেনিস বল ও স্নো স্প্রে’র চালান থাকলেও নিষিদ্ধ পোস্তাদানা আমদানী করে আমদানিকারকরা। ফলে টেনিসবল ও স্নো স্প্রে নামে আনা আমদানী নিষিদ্ধ ৪টি কন্টেইনার বোঝাই পোস্তাদানা জব্দ করে মোংলা কাস্টম কর্তৃপক্ষ।
মামলা দায়েরের পর গত ১৬ আগস্ট মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরী জানিয়েছিলেন, মোংলা বন্দরে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিদেশ থেকে এক পণ্যের পরিবর্তে নিষিদ্ধ অন্য পণ্য আমদানী করার ঘটনায় শিপিং এজেন্টসহ দুই আমদানীকারকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে মোংলা কাস্টমস হাউজ। এ মামলার সূত্র ধরে কারা এর সাথে জড়িত এবং আমদানীর সাথে সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার ও ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য তদন্তসহ গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে ২০ আগস্ট বৃহস্পতিবার তিনি জানালেন, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দু’টির মালিকদের আটকের জন্য পুলিশ তাদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন।
এদিকে বিপুল পরিমাণ আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য আটকের পর এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যাওয়ার আশংকা করছেন মোংলা বন্দর ব্যবহারকারীরা। তারা মনে করেন, মামলার এজাহারে আটক পণ্যের মূল্য প্রায় ১১ কোটি টাকা উল্লেখ করা হলেও তার প্রকৃত বাজার মূল্য অনেক বেশি। অবৈধ এসব পণ্য আমদানির সাথে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত। বিষয়টি উঠে এসেছে সর্বশেষ আটক এই অবৈধ পণ্য চালানের বিষয়ে থানায় দায়েরকৃত মামলার এজহারেও। শেষাংশে মামলার বাদি মোংলা কাস্টমস হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ ইমদাদুল হক উল্লেখ করেছেন, “উর্ধতন কর্মকর্তা/ কর্তৃপক্ষের অগোচরে শিপিং এজেন্ট/ সিএন্ডএফ এজেন্ট বন্দরের অসাধু কর্মচারিদের সহযোগিতায় প্রায়শঃই কন্টেইনারের সীল ভেঙ্গে মালামাল লুকিয়ে রেখে পরবর্তীতে ডুপ্লিকেট সীল ব্যবহার করে। তবে কাস্টমস এর উর্ধতন কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় বং বন্দরের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এবার চোরাচালান কার্যক্রম ব্যর্থ হয়েছে।”
বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় এবার অবৈধ চালানটি আটক হলেও এর আগে একই প্রক্রিয়ায় এই চক্রটি বৈধ পণ্য আমদানির আড়ালে বিপুল পরিমাণ অবৈধ পণ্য আনতে পারে বলে মোংলা বন্দর ব্যবহারকারীদের ধারণা। তাঁদের মতে, গত কয়েক বছরে উক্ত প্রতিষ্ঠান দুটি কর্তৃক আমদানিকৃত পণ্যের কাগজপত্র খতিয়ে দেখলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।
খুলনা গেজেট/এনএম