খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ পৌষ, ১৪৩১ | ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনা-ঢাকা রুটে নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ চলাচল শুরু

মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ড্রেজিং : বালু ডাম্পিং নিয়ে মুখোমুখি তিন পক্ষ

মোংলা প্রতিনিধি

মোংলা সমুদ্র বন্দরের পশুর চ্যানেলে ড্রেজিং প্রকল্পের বালু ডাম্পিং ইস্যুতে চীনা কোম্পানি-বন্দর কর্তৃপক্ষ ও গ্রামবাসি মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। কৃষি জমি ও মৎস্য খামারের ক্ষতিপূরন না দিয়ে জোরপূর্বক ডাইক নির্মান ও বালু ডাম্পিং প্রচেষ্টার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন-মৎস্য ঘের, ফসলি জমি ও জলাভূমির শ্রেনী বিন্যাশে হুমকির মুখে পড়বে জীববৈচিত্র্য স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা। আর চলতি ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মৌসুমে উড়ো বালুর আগ্রাসনে বসবাসের অনুপযোগি পরিবেশের শংকায় চরম হতাশার মধ্যে পড়েছেন শত শত গ্রামবাসী। তাদের দাবী-বন্দর কর্তৃপক্ষ ও চীনা কোম্পানি পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই নাম মাত্র ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে ফসলি জমি ও মৎস্য ঘেরে বালু ডাম্পিং প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এ অবস্থায় জমির মালিক-সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।

সোমবার সকাল ৯ টায় থেকে দুপুর ১২ টা নাগাদ নারী-পূরুষ সহ শত শত গ্রামবাসী তাদের ফসলি জমি ও চিংড়ি ঘেরে রক্ষার দাবীতে সমবেত হন পশুর নদীর তীরবর্তী চিলা ইউনিয়নের সুন্দরতলা এলাকায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা সমবেত হয়। এ সময় এক মানববন্ধন সমাবেশ সহ সংবাদ সম্মেলনে গ্রামবাসীর পক্ষে মোঃ আলম গাজী লিখিত বক্তব্যে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ড্রেজিং কাজে নিয়োজিত চীনা কোম্পানি জমির মালিকদের কিছু না জানিয়ে কৃষি জমি-মৎস্য ঘের শুকিয়ে জোর পুর্বক বালু ডাম্পিং করার জন্য গত দু’সপ্তাহ ধরে ডাইক নির্মান শুরু করেছে। পরে তারা এ বিষয় আপত্তি জানালে-১০ বছরের ক্ষতিপূরন দেয়ার আশ্বাস দিয়ে আসছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কৃষি-মৎস্য ঘেরের জমিতে বালু ডাম্পিং করা হলে জীবন-জীবিকার উৎস বন্ধ হয়ে যাবে বলে দাবী গ্রামবাসীর।

গ্রামবাসিরা আরো জানান, যে জমিতে তারা চাষাবাদের মাধ্যমে ধান উৎপাদন করেন সেই একই জমিতে মৎস চাষ করে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হয়। তাই ধান উৎপাদন ও মাছের চাষ বন্ধ হলে বেকারত্ব সহ পথে বসতে হবে অসংখ্য পরিবারের। এ ছাড়া বালু ভরাটের কারেন আগামী ৫০ বছরের জন্য চরম দূরাবস্থা এবং আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাই ফসলি-মৎস্য চাষের জমিতে নদী ড্রেজিংয়ের বালু ডাম্পিং এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন জমির মালিক ও গ্রামবাসী। আর এ জন্য কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এ অবস্থায় বন্দর কর্তৃপক্ষ -চীনা ড্রেজিং কোম্পানি এবং মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন।

গত তিন দিন পুর্বে এক দফা বালু ভরাটের কাজ বন্ধ করে দেয় গ্রামবাসী। পরে তাদের ম্যানেজ করতে একদল সুবিধাভোগী (দালাল) প্রকৃতির লোক গ্রামে ঘুরে ঘুরে কিছু কিছু জমির মালিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টায় ব্যার্থ হয়। তবে জমির মালিকদের একটাই দাবী তাদের ক্ষতিপুরণ না দিলে জমিতে বালু ভরাট করতে দেয়া হবেনা বলে কঠোর হুশিয়ারী দেন গ্রামের শত শত ভুক্তভোগী নারী-পুরুষরা।

এ প্রসঙ্গে বাপা’র বাগেরহাট জেলা সমন্বয়কারী নুর আলম শেখ বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের মতামত নিয়ে প্রকল্প গ্রহন করা উচিৎ। আলোচনা ছাড়াই প্রকল্প গ্রহন ঠিক হয়নি। জমির মালিকদের যে ১০ বছরের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেয়া হয়েছে সে ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময়ের জন্য ফসল সহ পরিবেশগত ক্ষতির মুখে পড়েবেন ফসলি জমির মালিক-সাধারণ মানুষ।

এ বিষয় মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার জানান, ড্রেজিং প্রকল্পের বালু ডাম্পিং করার জন্য ১০ ফুট উচ্চতার ডাইক নির্মান ও ৮ ফুট পর্যন্তু বালু ভরাট করার কথা থাকলেও অতিরিক্ত উচ্চতায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া এলাকাবাসির উত্থাপিত নানা অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা ভুমি কর্মকর্তাকে সঙ্গে সরোজমিন পরিদর্শনে অনেক অসংগতি পাওয়া যায়। এ সকল বিষয় জেলা প্রশাসককে অবগত করা হয়েছে। তিনিই এব্যাপারে ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, আগে ৭শ কোটি টাকা ব্যায় আউটার বার ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বন্দরের গতিশীল ও উন্নয়নের জন্য এবার ৭শ’ ৯৪ কোটির টাকা ব্যয়ে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের ইনার বার ড্রেজিং প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। আর ড্রেজিং প্রকল্পের কাজের জন্য দুটি চীনা কোম্পানিকে চুক্তি হয়েছে। গত ১৩ মার্চ নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী শুভ উদ্বোধনের পর থেকে শুরু হয়েছে নদী খননের কাজ। নদী খননের বালু ডাম্পিং করার জন্য ১ হাজার একর ফসলি জমি ও মৎস্য ঘের এলাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে নেয়া হবে। এ ছাড়া ৫শ’ একর সরকারি খাস জমি চিহিৃত করা হয়েছে।

নদীর বালু ডাম্পিং বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা জানান, ওই এলাকার মোট জমির মধ্যে মাত্র ১৩০ একর জমি হুকুম দখল করা হয়েছে। আরো ১২০ একর জমি হুকুম দখলের প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া খননকৃত পলি রাখার জন্য পশুর নদীর তীরবর্তি সরকারী জমি ছাড়া মোট ৭০০ একর জমি দরকার। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে যাদের জমি হুকুম দখল করা হয়েছে তাদের অচীরেই বকেয়া টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক শ্রেণীর সুবিধা আদায়ের লোক গ্রামের নিরীহ লোককে ভুল বুঝিয়ে উস্কে পরিস্থিতি ঘোলাটে বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে যাদের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ক্ষতিপুরণ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে বলে জানান বন্দর চেয়ারম্যান।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!