খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ পৌষ, ১৪৩১ | ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ আজ

মোংলায় ৮ দিনের বিশেষ লকডাউন

মোংলা প্রতিনিধি

করোনা সংক্রমণে ক্রমেই বিপদজনক হয়ে উঠছে মোংলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। প্রতিদিনই বাড়ছে নতুন করোনা রোগীর সংখ্যা। মোংলায় গত এক সপ্তাহ ধরে করোনার উর্ধ্বমুখী সংক্রমণে আতংঙ্কিত হয়ে পড়েছে সাধারন মানুষ। পরিস্থিতি চলে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দ্রুত করোনা সংক্রমণে রোধে মোংলায় কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন।

রবিবার (৩০মে ) থেকে আগামী রোববার (৬ জুন)পর্যন্ত পৌর শহরে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। উপজেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার এ লকডাউন ঘোষণা করেন।

মোংলা পোর্ট পৌরসভায় এলাকায় লকডাউনের প্রথম দিনে রোববার সকাল থেকেই শহরের কাঁচা, মুদি ও মাছ বাজার ব্যতীত সকল দোকান পাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে ভ্যান, রিক্সা ও অটো রিক্সা চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। শহরে লোকজনের উপস্থিতি ছিলো অন্য দিনের তুলনায় কম। অধিকাংশের মুখেই ছিলো মাস্ক। লকডাউন সফল করতে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশের টহল ছিল দেখার মতো। সকাল থেকেই প্রতিটি পয়েন্টে টহল জোরদার করা হয়েও।

উপজেলা প্রশাসনের দেয়া বিধিনিষেধে বলা হয়, মাস্ক পড়া ব্যতীত কাউকে রাস্তায় পাওয়া গেলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। পৌর শহরে প্রবেশ সীমিত থাকবে, জরুরী পরিবহন ব্যতীত কোনো যানবাহন শহরে ঢুকবেনা। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন থাকবে। ঔষুধ ও কৃষিপণ্য ব্যতীত সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান সকাল ৬ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। অন্য এলাকা থেকে, কার্গো ও লাইটার জাহাজ, বড় জাহাজ থেকে কোন নাবিক পৌরশহরে প্রবেশ করতে পারবেনা। প্রয়োজনে খাদ্যপণ্য পৌরসভার লোকজন জাহাজে পৌঁছে দিবে। যার জন্য একটি কমিটিও করা হয়েছে। নদীর পারাপারের জন্য সর্বোচ্চ ১৬ জনের বেশি বহন করা যাবেনা এবং সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

এ দিকে লকডাউনে সব বন্ধ থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোংলা বন্দরের বহির্নোঙরে দেশী-বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজ ও বন্দর জেটিতে পণ্য খালাস-বোঝাই কাজ স্বাভাবিক গতিতে চলছে। শিল্প এলাকার বিভিন্ন ফ্যাক্টরীতেও উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল। তবে বন্দর এলাকায় বাহির থেকে সড়ক পথে আসা দুরপাল্লার যানবাহন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করবে বলেও জানায় বন্দর কতৃপক্ষ।

মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পর থেকে মোংলায় করোনা সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়তে থাকে। গত মাসের ২০ তারিখ থেকে হাসপাতালে করোনা শনাক্তে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেষ্ট শুরু হলে ১ ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এভাবে প্রতিদিনই মোংলায় করোনা রোগী শনাক্ত করার কার্যক্রম চলে আসছে। গত এক সপ্তাহে ১০৯ জনের করোনা ভাইরাসের পরিক্ষা করানো হয় তার মধ্যে ৬৩ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে শনাক্তের হার প্রায় ৭০ শতাংশ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জীবেতোষ বিশ্বাস বলেন, করোনার প্রথম দফায় ২০২০ সালে মোংলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯২ জন, যা ছিল জেলার অন্যান্য জায়গার তুলনায় খুবই কম। কিন্ত চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত মোংলা হাসপাতালে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেষ্ট শুরু হওয়ার পর থেকেই করোনা আক্রান্তের হার বাড়তে শুরু করে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে করোনা রোগীতে ভরে গেছে। এভাবে সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। যারা করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাও কঠিন হয়ে পরবে।

মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, মোংলায় সরকারের দেয়া কঠোর বিধি নিষেধ মেনে চলার জন্য প্রচারণা করার পরে মানুষ তা মানতে চাচ্ছেনা। কিন্তু মরন ঘাতক থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, মোংলায় করোনা পজেটিভের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সকাল থেকে মাঠে রয়েছে। আজ রোববারও মোংলার এক ব্যাবসায়ী মারা গেছে। বিধি নিষেধ অমান্যকারীদের আইনের অয়োতায় আনা হবে। যে ৭টি বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা প্রতিটিইি মানুষের মেনে চলার আহবান জানান তিনি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মোংলা উপজেলায় ৮হাজার ৪৬৫ জনের করোনা ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। এখানে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৯৭ জন, মারা গেছে দুই ধাপে ৬জন। বেশ কয়েকজন সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরে আসলেও বাকিরা চিকিৎসাধীন রয়েছে।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!