মোংলা কওমী মাদ্রাসায় সহপাঠীর হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে পিতৃহারা এতিম খানার মাদ্রাসার ছাত্র শিশু সানি শেখ। অসুস্থ ওই শিশুর অভিভাবকদের খবর বা চিকিৎসা না দিয়ে শিক্ষকরা দু’চোখে চুন আর হলুদের গুড়ো লাগিয়ে পড়ার কক্ষে আটকে রাখায় দুটো চোঁখই হারাতে বসেছে অসহায় এ শিশুটি। এ ব্যাপারে মা বাদী হয়ে মোংলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। তবে তদন্ত করে সত্যতা পেলে ওই মাদ্রাসা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তির আশ্বাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার।
শিশু বয়সেই বাবাকে হারিয়ে এতিম হয় মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের সানি শেখ। মায়ের আশা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে বড় হয়ে দ্বীনি-ইসলামের কাজ এবং মা-বোনকে দেখভাল ও মাতা-পিতার জন্য দোয়া করবে বলে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে মোংলার বহুমুখী কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি হয় সানি। কিন্ত মাদ্রসারা শিক্ষকরা প্রায় সময়ই কারণে অ-কারণে মারধর করতো সানিকে। পাশাপাশি বহুবার সহপাঠীদের হাতেও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে সানিকে।
এদিকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৮ অক্টোবর রাতে পড়ার কক্ষে হঠাৎ রমজান নামের এক সহপাঠী ছাত্র ঝাপিয়ে পড়ে সানির উপর। ওই সময় রমজান হাত দিয়ে তার দু’চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করে এবং দু’হাত দিয়ে সানির চোখের পাশ রক্তাক্ত জখম করে রমজান। এসময় সানির ডাক চিৎকারে অন্য সহপাঠীরা এগিয়ে আসলেও মাদ্রাসায় দায়িত্বে থাকা শিক্ষক মাওলানা নুরানীসহ অন্যরা এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ সানিসহ তার পরিবারের। রাতে বা সকালে সানির অভিভাবককে খবর না দিয়ে দু’চোঁখে চুন ও হলুদের গুড়া দিয়ে পড়ার কক্ষে আটকে রাখে শিক্ষকরা। অন্য ছাত্রদের মাধ্যমে খবর পেয়ে শনিবার বিকালে মা রাবিয়া বেগম আহত ছেলেকে উদ্ধার করে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়। তবে চোখের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় মেডিকেলে নেয়ার পরামর্শ দেয় চিকিৎসক। এ ব্যাপারে জানাজানি হলে মাদ্রাসাজুড়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয় এবং ছাত্র/ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
থানার অভিযোগের সুত্র ধরে রোববার রাতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং আজ সোমবার সন্ধ্যায় বহুমুখী মাদ্রসা পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক ও নির্যাতনের শিকার ছাত্র সানি ও তার অভিভাবকদের থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দপ্তরে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয় বলে জানায় এ এস আই সাধন কুমার।
মা রাবিয়া বেগম জানায়, অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়ে দুই সন্তান বুকে আকড়ে ধরে রেখেছি। মাদ্রাসায় লেখাপড়ার জন্য দিয়েছি, বড় হয়ে মাওলানা হবে। কিন্ত ছেলেকে মেরে চোখে চুন ও হলুদের গুরো লাগিয়ে রুমে আটকে রাখে, অসুস্থ ছেলেকে দেখতে খবরও দিলো না মাদ্রাসার শিক্ষকরা।
মাদ্রসার শিক্ষক নুরানী বলেন, বিভিন্ন এলাকার ছাত্র/ছাত্রীরা লেখাপড়া করতে আসে, তবে বেশী ছাত্র/ছাত্রী এক জায়গায় থাকলে একটু সমস্যাতো থাকবেই। তবে নিজের দোষ স্বীকার করে আহত শিশুটাকে সুস্থ করার জন্য নিজেরা হলুদের গুড়ো ও চুন দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানায় এ শিক্ষক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, বহুমুখী মাদ্রাসায় সহপাঠীর হামলায় সানি নামের এক ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছে শুনেছি। তবে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দিয়েছে এবং বলে দেয়া হয়েছে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
খুলনা গেজেট/এনএম