বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পৌরসভা বিএনপির ঘাঁটি বলে অনেক আগেই পরিচিত। প্রথাগতভাবেই নির্ভার দলটি । যে কারণে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী জিতেছিলেন গতবারের নির্বাচনে। এবারের নির্বাচনে বিএনপির দুর্গে হানা দিয়ে মেয়র পদ ছিনিয়ে নিতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি নিজেদের বিজয় ধরে রাখতে তৎপর দলটির প্রার্থী। তবে ভোটের যুদ্ধে সমানে লড়ছে বিএনপিও।
সোমবার পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি মুদি দোকানে ভোট চাইতে আসেন আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আব্দুর রহমান । এ সময় দোকানে উপস্থিত ভোটারদের তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকা উন্নয়ন বঞ্চিত। নৌকা বিজয়ী হলে এলাকার আমূল পরিবর্তন হবে। পরে ওই দোকান থেকে বের হয়ে এলাকার পথচারী ও ব্যবসায়ীদের কাছেও ভোট চান তিনি।
পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালান বিএনপির প্রার্থী জুলফিকার আলী। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ধানের শীষে ভোট দিলে এলাকায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
তবে ভোটারেরা ভালো-মন্দ বিবেচনা করেই ভোট দেবেন বলে জানান। নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এই পৌরসভায় মূলত লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপির প্রার্থীরা জয় পেয়েছিলেন। সে বারের নির্বাচনে ৯ টি ওয়ার্ডের ৮ জন কাউন্সিলর ও ২ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নিয়ে বিজয় ছিনিয়ে নেন বর্তমান মেয়র জুলফিকার আলী। পরপর ১০টি বছর মেয়রের চেয়ারে বসেছিলেন বিএনপির এ মেয়র। কিন্তু এবারের নির্বাচনের চিত্র উল্টোটা হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। এই নির্বাচনের মধ্যদিয়ে পৌরসভাটি নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণাও। কর্মী-সমর্থকেরা পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন। ভৌগলিকভাবে অবস্থান থাকার ফলে রামপাল, মোড়লগঞ্জের সঙ্গে মোংলার একটি আত্মীয় যোগসূত্র রয়েছে। যে কারণে মোংলার ভোটারদের আকৃষ্ট করার মতো তাদের যথেষ্ট পরিমাণ সক্ষতা থেকেই যাচ্ছে।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভোটার বলেন, প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভা প্রতিষ্ঠাতা থেকেই বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এখন এই ঘাঁটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হানা দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনতে চাইছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।
স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোংলার পার্শবর্তী উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ভোটারদের দরজায় গিয়ে মোংলা বন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে ভোট প্রার্থনা করছেন। অন্যদিকে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা কৌশলে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে এ পৌরসভাটিকে আবারও নিজেদের দখলে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা ও বিগত সময়ে নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করেও উন্নয়নের ধরা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
মোংলা পৌরসভায় এ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ১৬ জানুয়ারি। নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ পৌরসভায় ৩১ হাজার ৫২৮ জন ভোটার রয়েছে। এবারের নির্বাচনে দু‘জন মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১২ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মোংলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান জসিম মুঠোফোনে খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘গতবারের পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় কোন্দল থাকার কারণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি। এখন আগে ভাগেই মাঠে নেমে পড়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর অবস্থা বেশ ভালো।’
জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক লায়ন ডক্টর শেখ ফরিদুল ইসলাম খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য বিএনপির প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা পুরোদমে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে আমাদের প্রার্থীর বিজয়ে অনেকটা আশাবাদী।’
খুলনা গেজেট / এআর