বাবা-মা, ভাই-বোন, পরিবার-পরিজন, পাড়াপড়শি এমনকি সমাজেও ঠাঁই নেই। জীবন ধারণের তাগিদে বাজার থেকে সবজি তোলা, দোকান থেকে ৫-১০ টাকা নেয়া, বিয়ে বাড়িতে নেচে-গেয়ে কিছু টাকা নেয়া- এভাবেই পেট চলে। তাতেও আপত্তি অনেকের। বেঁচে থাকাই যেন বিষাদময় তাদের।
এটা কি মানুষের জীবন? হ্যাঁ, বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) জীবনের চিত্র এমনই। তারা মানুষ, তাদেরও যে অধিকার আছে এমনটা পরিবার ও সমাজ কেইউ চিন্তা করেনা।
এ সকল মানুষদের ভাগ্য বদলে এগিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার মানবিক উদ্যোগে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা। মুজিববর্ষে তাদের পাকা ঘর ও কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
নিজেদের কোনো দোষ না থাকলেও শুধু জন্মগত ভিন্নতার কারণে পরিবার-সমাজ বিচ্যুত হয়ে মানুষের কাছে হাত পেতে যে জীবন চলছিল, তা হয়ত বদলে যাবে মুজিববর্ষের এ উপহারে। ভূমিহীন-গৃহহীন, অসহায়-অস্বচ্ছলদের পুনর্বাসনে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার উপকারভোগী হয়েছেন মোংলার তৃতীয় লিঙ্গের জাবেদ শেখ।
অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ২৬ বছর বয়সী জাবেদ শেখ। সেখানেও ছিল নানা বিড়ম্বনা। তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মানুষ হওয়ায় কেউ বাসা ভাড়া দিতে চাইত না। দিলেও সময়-অসময়ে সমাজের চাপে বের করে দেওয়া হতো। মানুষ হিসেবে কোনো মর্যাদা ছিল না। রাস্তাঘাটে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের পাশাপাশি নানা কটুবাক্য ছুড়ে দিত লোকজন। মানুষের কাছে চেয়ে-চিন্তে খাওয়া সমাজের অবহেলায় এভাবেই দিন কেটেছে জাবেদ শেখের।
কিন্তু জাবেদ শেখ এখন উপজেলার কামারডাঙ্গা মৌজার একজন স্থায়ী বাসিন্দা। ঘর পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে জাবেদ শেখ বলেন, ‘আমাকে ঘর ও জমি দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
হিজড়াদের কল্যাণে শেখ হাসিনার এমন পদক্ষেপ এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালের নভেম্বরে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল ভোটার তালিকা নিবন্ধন ফরমের (ফরম-২) ক্রমিক নম্বর ১৭ সংশোধন করে লিঙ্গ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ‘পুরুষ’ ও ‘মহিলা’র পাশাপাশি ‘হিজড়া’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা হিজড়াদের জন্য এ যাবৎকালের বড় স্বীকৃতি। সরকার হিজড়াদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় একই সঙ্গে তাদের সাংবিধানিক অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার এ জনগোষ্ঠীর মর্যাদা নিশ্চিত করে পারিবারিক, আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা, বাসস্থান, স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; সর্বোপরি তাদের সমাজের মূলধারায় এনে দেশের সার্বিক উন্নয়নে তাদের সম্পৃক্ত করতে প্রথম এগিয়ে এসেছিল শেখ হাসিনার সরকার। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকার গৃহীত ‘হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম’ এখন অনেকটা এগিয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, যাদের মা-বাবাসহ পরিবারের লোকজনও সমাজে স্থান দেননি, সেই তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মানুষদের জন্য মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে নিজস্ব ঘর, জমিসহ স্বাবলম্বী হওয়ার সব ব্যবস্থা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি- দেশের সব মানুষ যাদের ঘর ও থাকার জায়গা নেই, তাদের জায়গা ও ঘর করে দেবেন। এ লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে মোংলা উপজেলায় ৫০টি ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও রয়েছেন।সেখানে আরও কেউ আসতে চাইলে তাদেরও পুনর্বাসন করা হবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই