মোংলায় করোনা ভাইরাসের থাবা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, পরিস্থিতি অনুকূলে না আসায় উপজেলা প্রশাসন ৮দিনের কঠোর বিধি নিষেধ আরো ৭দিন বাড়িয়েছে। সংক্রমণরোধে গত ৩০ মে ৮দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি স্থানীয় তৎপরতা ও নজরদারি বাড়ানোর পরও কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছেনা করোনা পরিস্থিতি। কখনও ৫৫/৬০ আবার কখনও ৭০ শতাংশ বেড়ে দাড়ায় সংক্রমনের হার।
রোববার (০৬ জুন) বিকালে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেওয়া তথ্য মতে ৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২০ জন আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়। মৃত্যু হয়েছে দুই জনের।
এলাকাবাসী জানান, প্রশাসন যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তা শুধু পৌর শহরের সীমিত জায়গায় সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাস চলাচল, মোংলা উপজেলার মধ্যেই ইপিজেডসহ ৫০টি শিল্প কলকারখানা চালু রেখে কিভাবে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয় তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই।
এসকল প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন সকাল-বিকাল কয়েক হাজার নারী-পুরুষ সামাজিক দুরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই গাদাগাদি করে খেয়া পারাপার হয়। সড়ক পথে দূর পাল্লার পরিবহনে বোঝাই করে পণ্য নিয়ে বন্দরসহ শিল্পাঞ্চলে ঢুকছে ট্রাকসহ বিভিন্ন প্রকারের গাড়ী। সকাল থেকে বাস বোঝাই করে আসছে ইপিজেড ও অন্যান্য শিল্পকারখানার শ্রমিক। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসনের কোন তৎপরতাই চোখে পড়েনা। বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও একেক জায়গার চিত্র একেক রকম। করোনা সংক্রমণের হার কমাতে হলে সবজায়গাতে সমান নজরদারি না করলে কোনভাবেই পরিস্থিতি অনুকূলে আনা যাবেনা বলে জানায় সচেতন মহলের অনেকেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জীবেতোষ বিশ্বাস জানান, জুন মাসের শুরুতে মোংলা করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। ৭ দিনের ব্যবধানে মোট ২০৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১২৪ জনের করোনা পজেটিভের খবর পাওয়া গেছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে তবে সরকারী জরিপে মারা গেছে ৫জন। বাকি দুইজন এখানে নমুনা পরীক্ষা না করায় তাদের মৃত্যুর তালিকায় নাম নেই।
মোংলা বন্দর ও ইপিজেডের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, মোংলা বন্দর এলাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাপনা করবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ভেতরের কারখানাগুলোর শ্রমিকদের পালাক্রমে ডিউটি সিফট করে দিচ্ছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, মোংলা পৌরসভায় কয়েকজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তবে এর সঙ্গে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম সম্পর্কিত নয়। বন্দর এলাকায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা সবাই বন্দরের কর্মচারী। তাঁরা কেউ করোনায় সংক্রমিত নন। বন্দরের ব্যাবসা বাণিজ্য ও বন্দর সচল রাখতে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখেই বন্দরের কার্যক্রম চলবে বলে জানান তিনি।
এদিকে সোমবার থেকে আবারও নতুন করে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। যা আগামী ১৩ জুন পর্যন্ত বলবত থাকবে। যদি এর মধ্যেও নিয়ন্ত্রনে না আসে তবে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে মোংলায় অবস্থিত অন্যান্য সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় রেখে করোনা সংক্রমণরোধে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার। তিনি আরো জানান, বিধি নিষেধ বাস্তবায়নে এখন থেকে পুলিশ, আনসার সদস্যদের পাশাপাশি সহায়ক ফোর্স হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের সদস্যরা।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি