তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা, কি পৌনে সাতটা বাজে। মোংলা দিগরাজের বসুন্ধরা গ্যাসফিল্ডে হঠাৎ হৈচৈ। গ্যাসফিল্ডের কোন কর্মকর্তারা বাইরের কাউকে কিছু বলছেন না। তার কিছুক্ষণ পর জানা গেল সেখানে আগুন লেগেছে। গ্যাসফিল্ডে গ্যাস সিলিন্ডার রিফিলের সময় মিস ফায়ার হয়ে ছয় জন দগ্ধ হয়েছেন। তার মধ্যে হাসান শিকদার ও নুর আলমের অবস্থা খুবই আশংকাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসার জন্য রাতে পাঠানো হয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছিলেন দগ্ধ খুলনার বটিয়াঘাটার নুরল ইসলামের ছেলে নুর আলমের (২৬) মা মিনা বেগম। আল্লাহর কাছে বার বার প্রার্থনা করছিলেন ছেলের সুস্থ্যতার জন্য।
নুর আলমের মা মিনা বেগম জানান, দু’ বছর ধরে তার ছেলে বসুন্ধরা গ্যাসফিল্ডে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তারা বটিয়াঘাটা উপজেলার খারাবাদ বাইনতলা গ্রামের বাসিন্দা। ছেলে সবে মাত্র বিয়ে করেছেন। প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে কর্মক্ষেত্র দিগরাজ বসুন্ধরা গ্যাসফিল্ডে যান, রাতে আবার বাড়ি ফিরে আসেন সে। সে গ্যাসফিল্ডের বয়লারের সম্মুখে কাজ করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা বা তার পরে দিগরাজ থেকে মোবাইলে একটা ফোন আসে। ফোন পেয়ে তিনি দিগরাজ ছুটে যান। সেখানে গিয়ে এক কর্মকর্তার মুখে জানতে পারেন গ্যাসফিল্ডে সিলিন্ডার মিস ফায়ার করে আগুন লেগে ছয় জন দগ্ধ হয়েছেন। তার মধ্যে তার ছেলে নুর আলমও আছেন।
নুর আলমের মা জানান, প্রথমে মোংলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয় তাদের। এরপর সেখান থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজের সার্জরী বিভাগে আনা হয়। সেখানকার বড় ডাক্তার তাকে জানিয়েছেন তার শরীরের ৬০ ভাগের বেশি পুড়ে গেছে।রাতে তাকে ঢাকায় পাঠাতে হবে। না পাঠানো হলে তিনি মারা যেতে পারেন। পরে তাকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।
শুধু নুর আলম নয়, অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন আরও ৫ জন শ্রমিক।
তারা হলেন, মংলার শেয়ালা বুনিয়া থানা এলাকার মোঃ শাহ আলমের ছেলে মোঃ সাইফুল (৩০), রামপাল বাজারের রফিক শেখের ছেলে মোঃ তরিকুল ইসলাম (২৮), রামপালের সোনাতুনিয়ার ইনসান শেখের ছেলে আজিম (৩১), রামপাল পেডিখালী এলাকার মোঃ আরোজ আলীর ছেলে ইমরান(২৯) ও রামপালের পেরিখালী এলাকার আইয়ুব আলীর ছেলে হাসান সিকদার(২৮)।
অগ্নিদগ্ধ হাসান শিকদার পেড়ীখালীর আইয়ুব আলী শিকদারের ছেলে। ঘটনাটি বাড়ির কেউ জানতে না পারলে জেনেছেন তার বড় বোন জেবুন্নেছা। সন্ধ্যায় মোংলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাকে এ দুর্ঘনাটি জানানো হয়। সংসারের হাল ধরতে গিয়ে তিনি বসুন্ধরা কোম্পানীতে গত চার বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন। দুসংবাদ শুনে তিনি সাথে সাথে মোংলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ও পরবর্তীতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছোট ভাইয়ের সাথে চলে আসেন। তার সমস্ত শরীর পুড়ে গেছে। তাকে এখানে অক্সিজেন দেওয়া হয়। রাতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটের উদ্দেশে নেওয়া হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজের সার্জারী বিভাগের ডাঃ মো: খালেদ আঞ্জুম জানান, সন্ধ্যা সাড়ে সাত টার দিকে অগ্নিদগ্ধ ছয় জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। বাকী চার জনের অবস্থা কোন রকমের হলেও নুর আলম ও হাসান শিকদারের অবস্থা আশংকাজনক। তাদের রাতে পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।
মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, বসুন্ধরা এলপিজি গ্যাস ফ্যাক্টরিতে সিলিন্ডারে গ্যাস রিফিলের সময় স্পার্কিং থেকে সৃষ্ট আগুনে ছয়জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট /সাগর/এমএম