দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে মোংলায় আওয়ামী লীগে সৃষ্ট কোন্দল শেষ না হতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও দলের মধ্যে বেড়েছে বিভক্তি। নির্বাচন ঘিরে ত্রিমুখী অবস্থানে রয়েছে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ। এতে করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাধারণ কর্মীরা যেমন বিভ্রান্তিতে পড়ছেন সেই সঙ্গে আগামীতে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা বাড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
এ নির্বাচনের আগমুহূর্তে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়ছেন ৩ ভাগে। পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়ে সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা। নির্বাচনী প্রচার, জনসংযোগ, মিছিল-মিটিং, উঠান বৈঠকে তুমূল ব্যস্ত প্রার্থীরা। বিএনপি নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগেরই নেতাকর্মীরা। এ যেনো ঘরের শত্রু বিভীষণ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তিনজনই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় বিভেদ চরম আকার ধারণ করছে।
নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ক্ষমতাসীন দলের তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। আর তাদের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এর ফলে এ উপজেলার তৃণমূল আওয়ামী লীগে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইদ্রিস আলী ইজারাদার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে দলের ভেতরকার দ্বন্দ্ব এখনও চলমান। বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা বর্তমান উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে মাঠে রয়েছেন।
সব মিলিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তৃণমূলের এই বিভেদ থেকে বিরোধী দলগুলো ফায়দা নেবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (দোয়াত কলম) ইব্রাহীম হোসেনের পক্ষে সরাসরি প্রচার চালাচ্ছেন পৌর আ’লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আ: রহমান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ইস্রাফিল হাওলাদার সহ অন্য নেতারা। এ ছাড়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক (আনারস) ইকবাল হোসেনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচারে রয়েছেন গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইদ্রিস আলী ইজারাদার, পৌর যুবলীগের সভাপতি ও পৌর প্যানেল মেয়র কবির হোসেন, সুন্দরবন ইউপি চেয়ারম্যান ইকরাম ইজারাদার, পৌর ৮জন কাউন্সিলরসহ অনেকে।
তবে বর্তমান চেয়ারম্যান (চিংড়ি) আবু তাহের হাওলাদারের নির্বাচনি প্রচারে আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য কাউকে দেখা না গেলেও অনেক নেতা-কর্মী তাকে সমর্থন দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবলীগের এক কর্মী বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে তিনজনইনই হ্যাভিওয়েট প্রার্থী। স্বাভাবিকভাবে একজনের পক্ষে গেলে আরেকজন ক্ষুব্ধ হবেন। এমন অবস্থায় আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। আমরা তৃণমূলের রাজনীতি করি পদ পদবির আশায়, কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শীর্ষ নেতারা প্রার্থী হওয়ার কারণে তাদের পক্ষে বা বিপক্ষে নির্বাচনে অংশ নিলে আস্থাভাজন না হওয়ার অপরাধে ভবিষ্যতে পদ না পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এক্ষেত্রে নেতা কর্মীদের মাঝে বিভেদ তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে মোংলা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আ: রহমান বলেন, এবারের উপজেলা নির্বাচন যেহেতু দল নিরপেক্ষ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ কাউকে দলীয় মনোনয়ন বা সমর্থন দেয়নি। অন্যান্য দল নির্বাচনে না থাকায় আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার ও প্রচারণায় লিপ্ত। এতে করে তাদের মধ্যে এক ধরনের বিভেদ তৈরি হয়েছে যা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় কিছুটা বিরোধ তৈরি হয়েছে সত্যি, তবে নির্বাচনের পর তা আর থাকবে না বলে আশা করি।
এ বিষয়ে সাংসদ বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, যেহেতু এটি দলীয় নির্বাচন নয় তাই দল কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। নির্বাচনী আচরনবিধিতে সংসদ সদস্যদের কোন প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার সুযোগ নেই। তাই আমিও কোন প্রার্থীকে সমর্থন দেইনি। জনগণ যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই নির্বাচিত করবে।
মোংলা পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি এমরান হোসেন বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবারের উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছেনা বিএনপি তাই স্থানীয়ভাবে আমাদের কোন প্রার্থী না থাকায় এ নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নে নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্রনিং কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন তৃতীয় ধাপে আগামী ২৯মে মোংলা উপজেলায় ব্যালটে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। যদি কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠী নির্বাচনের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা প্রতিহত করতে বদ্ধপরিকর। ভোটারদের আগামী ২৯মে নিজ নিজ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের আহ্বান জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এএজে