প্রায় আট মাস পর জাতীয় দলের জার্সি পরে খেলতে নেমেই গোলের দেখা পেলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু তার সুবিধাটা নিতে পারেনি আর্জেন্টিনা। চিলির সঙ্গে ড্র করেছে ১-১ গোলে। এর ফলে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে ওঠা হলো না মেসিদের।
আর্জেন্টিনা নিজেদের শেষ ম্যাচটা খেলেছিল সেই অক্টোবরে। এরপর করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চে আন্তর্জাতিক ফুটবলের বিরতিতে মাঠে নামা হয়নি আলবিসেলেস্তেদের। এর মাঝেই না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিলেন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তার মৃত্যুর পর এটিই ছিল মেসিদের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সে ম্যাচের আগে স্টেডিয়ামের বাইরে উন্মোচিত হয় ম্যারাডোনার ভাস্কর্য, ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে নেমে ম্যারাডোনাকে স্মরণ করে আর্জেন্টিনা।
দীর্ঘদিন পর মাঠে নেমে পুরো ম্যাচজুড়েই যেন নিজেদের খুঁজে ফিরেছে আর্জেন্টিনা। গতিহীন ফুটবল তো ছিলই, মাঝমাঠে সৃষ্টিশীলতার অভাব কোচ লিওনেল স্ক্যালোনির দলকে ভুগিয়েছে বেশ।
তবে মেসি ছিলেন তার চিরচেনা ছন্দেই। পেনাল্টি থেকে দলকে এগিয়ে দেওয়া গোলটা তো করেছিলেনই, এছাড়াও পুরো ম্যাচে ছিলেন সপ্রতিভ। পুরো ম্যাচে নিয়েছেন ছয়টি শট, যার চারটা ছিল লক্ষ্যে; লক্ষ্যভ্রষ্ট দুটো শটের একটা আবার কাঁপিয়ে ফিরেছে ক্রসবার। প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভো যদি দেয়াল হয়ে না দাঁড়াতেন, তাহলে হয়তো জয়ই তুলে নিতে পারত আর্জেন্টিনা।
কোচ স্ক্যালোনি এদিন দলকে মাঠে নামিয়েছিলেন ৪-৪-২ ছকে। দলে ছিল ইউরোপীয় লিগে খেলা ফুটবলারদের আধিক্য। গোলবারের নিচে ছিলেন ওয়েস্ট হ্যামের হয়ে দারুণ এক মৌসুম কাটিয়ে আসা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। তার সামনে ছিলেন হুয়ান ফয়েথ, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, লুকার মার্টিনেজ, নিকোলাস টালিয়াফিকো। মাঝমাঠে ডাবল পিভোটে ছিলেন লিয়ান্দ্রো পারেদেস আর রদ্রিগো দে পল। ওয়াইড মিডফিল্ডার হিসেবে ছিলেন আনহেল ডি মারিয়া, আর লুকাস ওক্যাম্পোস। মেসির সঙ্গে ফরোয়ার্ড লাইনে সঙ্গী ছিলেন লাওতারো মার্টিনেজ।
শুরু থেকেই নিচে থেকে খেলা গড়ে আক্রমণে ওঠার কৌশলে খেলেছে স্ক্যালোনির দল। মাঝমাঠের নিস্প্রভতায় সেটা খুব একটা কাজে দেয়নি অবশ্য। ২৪ মিনিটে দল পেনাল্টি পেয়েছে প্রথমার্ধের বাকিটা সময় নিজের ছায়া হয়ে থাকা লাওতারোর কল্যাণে। আনহেল ডি মারিয়ার পাস থেকে প্রতিপক্ষ বিপদসীমায় বলের দখল নিতে গিয়ে ফাউলের শিকার হন ইন্টার মিলান স্ট্রাইকার, দীর্ঘ ভিএআর পরীক্ষার পর পেনাল্টি যায় আর্জেন্টিনার পক্ষে। পেনাল্টি থেকে দলকে এগিয়ে দেন মেসি।
রক্ষণ শুরু থেকে বেশ আঁটসাঁটই ছিল। তবে সেটপিস থেকে গোল হজম করার পুরনো রোগটা ফিরে এসেছিল দলে। ৩৫ মিনিটে গোলটাও হজম করলো সেই সেটপিস থেকেই। ফ্রি কিক থেকে বাড়ানো চার্লস আরাঙ্গেজের দারুণ বলটা গ্যারি মেদেল হয়ে আসে মেসির সাবেক বার্সেলোনা সতীর্থ অ্যালেক্সিস সানচেজের কাছে, সহজ ট্যাপ ইনে গোলের সুযোগটা কাজে লাগাতে ভুল করেননি ইন্টার মিলান ফরোয়ার্ড। ১-১ সমতা ফেরায় দুই বারের কোপা আমেরিকা জয়ীরা। সমতায় থেকে বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে কিছুটা রক্ষণে মনোযোগী হয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা ও চিলি, ফলে খেলার গতিও ঝিমিয়ে পড়ে আরও। তবে শেষের দিকে জয় তুলে নেওয়ায় মনোযোগী হয় আর্জেন্টিনা। ব্রাভো দেয়াল তুলে না দাঁড়ালে হয়তো জয়টাও ধরা দিত মেসিদের হাতে। ৮০ মিনিটে তাকেও অসহায় বানিয়ে দিয়েছিলেন মেসি। তবে তার ফ্রি কিক কাঁপিয়ে ফিরেছে ক্রসবার।
মিনিট দুয়েক পর ক্রসে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন লাওতারো। ৮৭ মিনিটে আবারও মেসির আক্রমণ, এবার বক্সের বাইরে থেকে নিয়েছিলেন জোরালো শট। কিন্তু ওই যে, ব্রাভো পণ নিয়ে নেমেছিলেন যেন! তার দারুণ এক সেভ আর্জেন্টিনাকে গোলবঞ্চিত রাখে। পরের মিনিটে ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ীর আরও একটা শট রুখে দেন সাবেক বার্সেলোনা গোলরক্ষক। ফলে বাছাইপর্বের পাঁচ ম্যাচে এ নিয়ে দ্বিতীয় ড্রয়ের কবলে পড়ে আর্জেন্টিনা।
খুলনা গেজেট/কেএম